আমাদের পোস্ট আপনাদের মুগ্ধ করতে পারে

This is default featured slide 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured slide 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Wednesday, July 11, 2018

গল্প শুনি

গল্প শুনি
Share:

এসো গল্প শুনি

এসো গল্প শুনি
Share:

golpo shuni

golpo shuni
Share:

Eshogolposhuni.blogspot.com

Eshogolposhuni.blogspot.com
Share:

Eshogolposhuni

Eshogolposhuni
Share:

Tuesday, May 22, 2018

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ ১৯৩৯ সালে ২৫ জুলাই কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার অন্তর্গত কামারগাতি গ্রামে। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর পিতা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। ☆☆ জীবিকাঃ অধ্যাপক ,লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, উপস্থাপক, সংগঠক ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ প্রবন্ধ, উপন্যাস ও কবিতা ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: সংগঠন ও বাঙালি ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ☆☆ প্রতিষ্ঠাতাঃ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র
Share:

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


☆☆ ছদ্ম নামঃ নীললোহিত, সনাতন পাঠক এবং নীল উপাধ্যায় ☆☆ জীবিকাঃ লেখক, ওপন্যাসিক, প্রবন্ধিক, সম্পাদক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৪ সালে (২১ ভাদ্র, ১৩৪১ বঙ্গাব্দ) ফরিদপুর জেলায়, বর্তমান যা বাংলাদেশের অন্তর্গত। জন্ম বাংলাদেশে হলেও তিনি বড় হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোটগল্প ☆☆ জাতীয়তা: ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: আত্মপ্রকাশ প্রথম আলো (প্রথম উপন্যাস), পূর্ব-পশ্চিম, সেই সময়, মধ্যরাতের মানুষ, কেউ জানে না ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: আনন্দ পুরস্কার (১৯৭২, ১৯৮৯), সাহিত্য একাডেমী পুরস্কার (১৯৮৫) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ স্বাতী বন্দোপাধ্যায় (বি. ১৯৬৭–২০১২) ☆☆ মৃত্যু: ২৩ অক্টোবর, ২০১২
Share:

হুমায়ূন আহমেদ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন ☆☆ পিতা-মাতা: পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ ☆☆ জীবিকাঃ লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার, নাট্যকার , রসায়ন এর প্রফেসর ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোট গল্প, প্রবন্ধ, জীবনী, কলাম, গান ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: এইসব দিন রাত্রি, নন্দিত নরকে, বহুব্রীহি, কোথাও কেউ নেই, হিমু সংক্রান্ত উপন্যাস, মিসির আলি সংক্রান্ত উপন্যাস, বলপয়েন্ট, কাঠপেন্সিল (২০১০), ফাউন্টেইন পেন, রংপেনসিল (২০১১) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১), শিশু একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক (১৯৯৪), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ গুলতেকিন আহমেদ (১৯৭৩-২০০৩), মেহের আফরোজ শাওন (২০০৫-২০১২) ☆☆ মৃত্যু: ১৯ জুলাই, ২০১২
Share:

সমরেশ মজুমদার


☆☆ জীবিকাঃ ঔপন্যাসিক, লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তাঁর জন্ম ১০ই মার্চ ১৯৪২ সালে (বাংলা ১৩৪৮ সনের ২৬শে ফাল্গুন) শরনন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, নাটক ☆☆ জাতীয়তা: ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: উত্তরাধিকার, কালবেলা, কালপুরুষ, গর্ভধারিনী বুনোহাঁসের পালক, জালবন্দী, মোহিনী, কালাপাহাড় ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: আনন্দ পুরস্কার (১৯৮২), সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার (১৯৮৪়)
Share:

সিকান্দার আবু জাফর


☆☆ জীবিকাঃ শিল্পী, সাঙ্গবাদিক, প্রকাশক, সম্পাদক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ সিকান্দার আবু জাফর ১৯১৮ সালে সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ নাটক, প্রবন্ধ ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: সিরাজউদ্দৌলা (১৯৬৫), মহাকবি আলাওল (১৯৬৬), শকুন্ত উপাখ্যান (১৯৫২), মাড়কসা (১৯৬০) ☆☆ মৃত্যু : আগস্ট ৫, ১৯৭৫
Share:

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর


☆☆ উপাধিঃ বিদ্যাসাগর ☆☆ জীবিকাঃ হেডপণ্ডিত, লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮২০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ সেপ্টেম্বর বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বীরসিংহ সেই সময় হুগলি জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা ভগবতী দেবী ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: বর্ণপরিচয় (১৮৫৫), ঋজুপাঠ, বেতাল পঞ্চবিংশতি, শকুন্তলা (ডিসেম্বর, ১৮৫৪; কালিদাসের অভিজ্ঞানশকুন্তলম্ অবলম্বনে), সীতার বনবাস , ☆☆ উল্লেখযোগ্য স্মৃতিস্তম্ভ: বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়, বিদ্যাসাগর সেতু ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ দীনময়ী দেবী ☆☆ মৃত্যু: ২৯ জুলাই, ১৮৯১
Share:

ইবরাহীম খাঁ


☆☆ জীবিকাঃ শিক্ষকতা, ওকালতী ,লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তিনি ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৪ সালে টাঙ্গাইল জেলার তৎকালীন ভুঞাপুর থানার অন্তর্গত বিরামদী (বর্তমানে শাবাজনগর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: কামাল পাশা, আনোয়ার পাশা, কাফেলা, বৌ বেগম, আল বোখারা ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৩), একুশের পদক (১৯৭৬) ☆☆ মৃত্যু: মার্চ ২৯, ১৯৭৮
Share:

আবু ইসহাক


☆☆ জীবিকাঃ সরকারী আমলা, লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তিনি ১ নভেম্বর, ১৯২৬ সালে শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানাধীন শিরঙ্গল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোটগল্প ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ☆☆ মৃত্যু: ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ ( ঢাকায় )
Share:

জহির রায়হান


☆☆ জীবিকাঃ চলচ্চিত্র পরিচালক, ঔপন্যাসিক, গল্পকার ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ জহির রায়হান ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোটগল্প ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: হাজার বছর ধরে (১৯৬৪), আরেক ফাল্গুন (১৯৬৯), বরফ গলা নদী (১৯৬৯), কয়েকটি মৃত্যু, একুশে ফেব্রুয়ারী (১৯৭০), দেমাক, ম্যাসাকার, একুশের গল্প ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক (১৯৭৭), বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭১), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯২) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ সুমিতা দেবী, সুচন্দা ☆☆ মৃত্যু: ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭২
Share:

শওকত ওসমান


☆☆ পৈত্রিক নামঃ শেখ আজিজুর রহমান ☆☆ জীবিকাঃ অধ্যাপক,লেখক, সাহিত্যিক, কবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ২ জানুয়ারি পশ্চিম বঙ্গের হুগলী জেলার জেলার সবল সিংহপুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন ☆☆ পিতা-মাতা: পিতা শেখ মোহাম্মদ এহিয়া, মাতা গুলজান বেগম ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ গল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, ছোট গল্প, নাটক, কবিতা, আত্মজীবনী, স্মৃতিখণ্ড, শিশুতোষ ইত্যাদি ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশি ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: জননী (১৯৫৮) (১ম উপন্যাস), ক্রীতদাসের হাসি (১৯৬২), সমাগম, জুনু আপা ও অন্যান্য গল্প (১৯৫২), মনিব ও তাহার কুকুর (১৯৮৬) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক, বাংলা একাডেমী, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ শান্তি দেবী, হিরন্ময়ী দেবী ☆☆ মৃত্যু: ১৪ মে, ১৯৯৮
Share:

আনিসুল হক


☆☆ জীবিকাঃ কবি, লেখক, নাট্যকার ও সাংবাদিক। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক এবং কিশোর আলোর সম্পাদক পদে কর্মরত আছেন। ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ আনিসুল হকের জন্ম মার্চ ৪, ১৯৬৫ সালে রংপুর বিভাগের নীলফামারীতে। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর পিতার নাম মো. মোফাজ্জল হক এবং মায়ের নাম মোসাম্মৎ আনোয়ারা বেগম। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোটগল্প ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: জলরংপদ্য (২০০২), জলরংপদ্য (২০০২), মা (২০০৩), আয়েশামঙ্গল, খেয়া, ফাঁদ, বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম, নাল পিরান, করিমন বেওয়া, প্রত্যাবর্তন, সাঁকো, মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী পরিচালিত ব্যাচেলর এবং মেড ইন বাংলাদেশ সিনেমার স্ক্রিপ্ট লিখেছেন ⍟⍟⍟ এছাড়া তিনি "থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার" টেলিভিশন সিনেমারও স্ক্রিপ্ট লিখেছেন। ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: শ্রেষ্ঠ টিভি নাট্যকার পুরস্কার, কবি মোজাম্মেল হক ফাউন্ডেশন পুরস্কার, বাংলা একাডেমী পুরস্কার ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ মেরিনা ইয়াসমিন
Share:

মুহম্মদ জাফর ইকবাল


☆☆ জীবিকাঃ লেখক, পদার্থবিদ ও শিক্ষাবিদ ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ জাফর ইকবালের জন্ম , ১৯৫২ সালের ২৩ ডিসেম্বর তারিখে সিলেটে। ☆☆ পিতা-মাতা: তার পিতা মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা আখতার খাতুন। বাবা ফয়জুর রহমান আহমদের পুলিশের চাকরির সুবাদে তার ছোটবেলা কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: উপন্যাস: আকাশ বাড়িয়ে দাও (১৯৮৭), সবুজ ভেলভেট (২০০৩) বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী: কপোট্রনিক সুখ দুঃখ (১৯৭৬), একজন অতিমানবী (১৯৯৮) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ ড.ইয়াসমীন হক
Share:

সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ়


☆☆ জীবিকাঃ সরকারী কর্মকর্তা, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, কবি ও সাহিত্য সমালোচক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তাঁর জন্ম চট্টগ্রাম শহরের ষোলশহর এলাকায়, ১৯২২ খ্রীস্টাব্দের ১৫ আগস্ট। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর পিতা সৈয়দ আহমাদুল্লাহ ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা; মা নাসিম আরা খাতুনও সমতূল্য উচ্চশিক্ষিত ও রুচিশীল পরিবার থেকে এসেছিলেন, সম্ভবত অধিক বনেদি বংশের নারী ছিলেন তিনি। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোটগল্প ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: লালসালু (১৯৪৯) ঢাকা, চাঁদের অমাবস্যা (১৯৬৪) ঢাকা, কাঁদো নদী কাঁদো (১৯৬৮), গল্প-সমগ্র (মার্চ, ১৯৭২) সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ-রচনাবলি ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০০১ শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার। ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ তার স্ত্রী ফরাসিনী। নাম: আন্-মারি লুই রোজিতা মার্সেল তিবো। তাদের আলাপ হয়েছিলো সিডনিতে। ওয়ালিউল্লাহ যেমন পাকিস্তানি দূতাবাসে, আন্-মারি তেমনি ছিলেন ফরাসি দূতাবাসে। দেড়-দু বছরের সখ্য ও ঘনিষ্টতা রূপান্তরিত হয় পরিণয় বন্ধনে। ওয়ালিউল্লাহ তখন করাচিতে। সেখানেই ১৯৫৫ সালের ৩ অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়। ধর্মান্তরিতা বিদেশিনীর নাম হয় আজিজা মোসাম্মত নাসরিন। মৃত্যু : অক্টোবর ১০, ১৯৭১
Share:

সৈয়দ আলী আহসান


☆☆ জীবিকাঃ জাতীয় অধ্যাপক, সাবেক উপাচার্য (জাবি,রাবি), বাঙ্গলা একাডেমীর সাবেক মহাপরিচালক, ইউ জি স্যার সাবেক চেয়ারম্যান ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবিন্ধিক, গবেষক, সম্পাদক, অনুবাদক ও জাতীয় অধ্যাপক সৈয়দ আলী আহসান ১৯২২ খ্রীস্টাব্দের ২৬ মার্চ বর্তমান মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: অনেক আকাশ (১৯৬০), একক সন্ধ্যায় বসন্ত (১৯৬২), সহসা সচকিত (১৯৬৮), উচ্চারণ (১৯৬৮), পদ্মাবতী (১৯৬৮), মধুমালতী (১৯৭১) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: নাসির উদ্দীন স্বর্ণপদক (১৯৮৫), মধুসূদন পুরস্কার (১৯৮৫), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭), জাতীয় অধ্যাপকরূপে নিযুক্তি (১৯৮৯), কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর) ২০০৩ ☆☆ মৃত্যু : ২৫শে জুলাই, ২০০২
Share:

দৌলত উজির বাহরাম খান


☆☆ প্রকৃত নামঃ আসা উদ্দীন ☆☆ জীবিকাঃ অল্প বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হলে চট্টগ্রামের অধীপতি নেজাম শূর তার পিতার উজির পদে তাঁকে অভিসিক্ত করেন ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ জন্ম আনুমানিক ১৬শ শতক চট্টগ্রাম জেলার ফতেয়াবাদ কিংবা জাফরাবাদে। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর পিতা মোবারক খান ছিলেন চট্টলাধীপতির উজির (মন্ত্রী) ☆☆ জাতীয়তা: বাঙালি ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: লায়লী-মজনু, ইমাম বিজয়
Share:

আহমদ ছফা


☆☆ জীবিকাঃ লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তাঁর জন্ম ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জুন চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার হাশিমপুর ইউনিয়নের গাছবাড়িয়া গ্রামে। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর পিতা মরহুম হেদায়েত আলী ওরফে ধন মিয়া। মা মরহুমা আসিয়া খাতুন। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, উপন্যাস, অনুবাদ ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশি ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: দ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস (১৯৭২), বাঙালি মুসলমানের মন (১৯৮১), ফাউস্ট - অনুবাদ (১৯৮৬), যদ্যপি আমার গুরু (১৯৯৮) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক (২০০২) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ শান্তি দেবী, হিরন্ময়ী দেবী ☆☆ মৃত্যু : জুলাই ২৮, ২০০১
Share:

আবদুল্লাহ আল-মুতী


☆☆ জীবিকাঃ সাবেক সচিব,অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞান লেখক, বিজ্ঞান কর্মী ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ জানুয়ারি ১, ১৯৩০ সালে সিরাজগঞ্জ জেলার ফুলবাড়ি গ্রামে আবদুল্লাহ আল-মুতীর জন্ম ☆☆ পিতা-মাতা: তার মা হালিমা শরফুদ্দিন এবং বাবা শেখ মইন শরফুদ্দিন ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে (১৯৫৫), অবাক পৃথিবী (১৯৫৫), জানা-অজানার দেশে (১৯৭৬), সাগরের রহস্যপুরী (১৯৭৬), তারার দেশের হাতছানি (১৯৮৪), আমাদের শিক্ষা কোন পথে (১৯৯৬), আকাশের সঙ্গে মিতালী (১৯৫৬) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী, স্বাধীনতা পদক (১৯৯৫), একুশে পদক পুরস্কার (১৯৮৫) ☆☆ মৃত্যু : নভেম্বর ৩০, ১৯৯৮
Share:

আল মাহমুদ


☆☆ প্রকৃত নামঃ মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ জীবিকা: কবি, সম্পাদক, সাংবাদিক, সাবেক পরিচালক, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী, বর্তমানে তিনি মাসিক নতুন কিশোকণ্ঠ পত্রিকার উপদেষ্টা হিসেবে আছেন ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ গ্রামীণ জীবন, নারী ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩৬-১৯৪৭), পাকিস্তানী (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশী (১৯৭১-বর্তমান) ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালি কাবিন, উপন্যাস সমগ্র, বখতিয়ারের ঘোড়া ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক, কিশোরকণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার
Share:

মীর মশাররফ হোসেন


☆☆ জীবিকাঃ ফরিদপুরের নবাব এস্টেটে চাকরি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ মীর মশাররফ হোসেন নভেম্বর ১৩, ১৮৪৭ সালে খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালীর একটি ছোট গ্রাম লাহিনিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু তার জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দির পদমদীতে অতিবাহিত করেন। । ☆☆ পিতা-মাতা: পিতা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন (মুসলিম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি) এবং মাতা দৌলতুন্নেছা ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ বাঙ্গালী ঔপন্যাসিক,নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: জমিদার দর্পন, বিষাদ সিন্ধু, বসন্তকুমারী নাটক, গাজী মিয়ার বস্তানী ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ আজিজ-উন-নেছা, বিবি কুলসুম ☆☆ মৃত্যু: নভেম্বর ১৩, ১৯১২
Share:

ইমদাদুল হক মিলন


☆☆ জীবিকাঃ ঔপন্যাসিক,গল্পকার,বর্তমানে তিনি দৈনিক কালের কন্ঠের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হিসেবে কর্মরত আছেন। ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন ১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে নানার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের লৌহজং থানার পয়সা গ্রামে। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর বাবার নাম গিয়াসুদ্দিন খান এবং মার নাম আনোয়ারা বেগম। ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: ঝরা পালক (১৯২৭), বপ্নলতা সেন (১৯৫২), ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬), সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮), জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪), রূপসী বাংলা (১৯৫৭) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৯২), বাচসাস পুরস্কার, চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণপদক ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ আফরোজা বেগম
Share:

আবু হেনা মোস্তফা কামাল


☆☆ জীবিকাঃ শিক্ষাবিদ, কবি ও লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তিনি পাবনার গোবিন্দা গ্রামে ১৯৩৬ সালের ১২ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: আপন যৌবন বৈরী (১৯৭৪), যেহেতু জন্মান্ধ (১৯৮৪), আক্রান্ত গজল (১৯৮৮) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: আলাওল পুরস্কার (১৯৭৫), একুশে পদক (১৯৮৭), আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ স্বর্ণপদক (১৯৮৯) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ লাবণ্য গুপ্ত (বি. ১৯৩০) ☆☆ মৃত্যু: ২৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৮৯
Share:

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


☆☆ ছদ্ম নামঃ অনিলা দেবী ☆☆ উপাধিঃ অপরাজেয় কথাশিল্পী , সাহিত্য সম্রাট ☆☆ জীবিকাঃ লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৮৭৬ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ☆☆ পিতা-মাতা: তাঁর পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে শরৎচন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁর দিদির নাম অনিলা দেবী ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ উপন্যাস, ছোটগল্প ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: জগত্তারিণী পদক (কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ শান্তি দেবী, হিরন্ময়ী দেবী ☆☆ মৃত্যু : ১৬ জানুয়ারি, ১৯৩৮
Share:

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়


☆☆ ছদ্ম নামঃ কমলাকান্ত ☆☆ পরিচিতি: প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় জুন ২৭, ১৮৩৮ সালে বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। ☆☆ পিতা-মাতা: পিতা: যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় ☆☆উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: দুর্গেশনন্দিনী, কপালকুণ্ডলা, মৃণালিনী, বিষবৃক্ষ, ইন্দিরা, যুগলাঙ্গুরীয়, চন্দ্রশেখর, রাধারানী, রজনী, কৃষ্ণকান্তের উইল, রাজসিংহ, আনন্দমঠ, দেবী চৌধুরানী , কমলাকান্তের দপ্তর ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ ১৮৬০ সালের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় ☆☆ মৃত্যু: এপ্রিল ৮, ১৮৯৪
Share:

শাহ মুহম্মদ সগীর


☆☆ জীবিকাঃ লেখক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ আনুমানিক ১৪-১৫ শতকের কবি। মুসলিম কবিদের মধ্যে তিনিই প্রাচীনতম। কবি ছিলেন গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজকর্মচারী। তাঁর কাব্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের কতিপয় শব্দের ব্যবহার লক্ষ করে ড. মুহম্মদ এনামুল হক তাঁকে চট্টগ্রামের অধিবাসী বলে বিবেচনা করেছেন। ☆☆ সাহিত্য ধরনঃ তাঁর কাব্যে ধর্মীয় পটভুমি থাকলেও তা হয়ে উঠেছে মানবিক প্রেমোপাখ্যান। ☆☆ জাতী: বাঙ্গালী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: গৌড়ের সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে (১৩৮৯-১৪১১ খ্রিস্টাব্দে) ইউসুফ-জোলেখা কাব্য রচনা করেন।
Share:

সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত


☆☆ ছদ্ম নামঃ নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ☆☆ উপাধিঃ ছন্দের যাদুকর ☆☆ জীবিকাঃ কবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিকটবর্তী নিমতা গ্রামে। তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের চুপী গ্রামে। ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: সবিতা (১৯০০), ফুলের ফসল (১৯১১), কুহু ও কেকা (১৯১২), সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), বেণু ও বীণা (১৯০৯), হোমশিখা (১৯০৭), হসন্তিকা (১৯১৯), বেলা শেষের গা ☆☆ মৃত্যু: জুন ২৫, ১৯২২
Share:

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর তাঁর পিতার কর্মস্থল বরিশাল জেলায়। তাঁর মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। ☆☆ জীবিকাঃ কবি, সাহিত্যিক ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: বাতাসে লাশের গন্ধ, উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে পাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮২), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৪), সোনালি শিশির ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার:মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮০) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে ☆☆ মৃত্যু: ১৯৯১ সালের ২১ জুন
Share:

মাইকেল মধুসূদন দত্ত


☆☆ ছদ্ম নামঃ টিমোথি পেনপোয়েম ☆☆ উপাধিঃ মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেটের জনক ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক ☆☆ জীবিকাঃ কবি, নাট্যকার ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। ☆☆ পিতা-মাতা: মাইকেল ছিলেন রাজনারায়ণ বসু ও তাঁর প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ বসু ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। ☆☆ জাতীঃ বাঙালী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: কাব্য : মেঘনাদ বধ কাব্য, তিলোত্তমা সম্ভব, দি ক্যাপটিভ লেডী, ব্রজাঙ্গনা নাটক: শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী, পদ্মাবতী, প্রহসন, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ,একেই কি বলে সভ্যতা ☆☆দাম্পত্য সংগীঃ রেবেকা ম্যাকটাভিস, হেনরিতা সোফিয়া হোয়াইট ☆☆মৃত্যু : ২৯ জুন, ১৮৭৩
Share:

জীবনানন্দ দাশ


☆☆ ছদ্ম নামঃ শ্রী ,কালপুরুষ ☆☆ উপাধিঃ রুপসী বাঙ্গলার কবি ☆☆ জীবিকাঃ কবি, ঔপন্যাসি, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, গীতিকার, সম্পাদক, অধ্যাপক ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি (বঙ্গাব্দ ফাল্গুন ৬, ১৩০৫) ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিলেন ঢাকা জেলার বিক্রমপুর পরগণা নিবাসী। ☆☆ পিতা-মাতা: জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক। মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন গৃহস্থ, কিন্তু তিনি কবিতা লিখতেন। তাঁর সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/ কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণীর পাঠ্য) ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ আধুনিক বাংলা কবিতা ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার (১৯৫২), সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৫৫) ☆☆ দাম্পত্য সংগীঃ লাবণ্য গুপ্ত (বি. ১৯৩০) ☆☆ মৃত্যু : অক্টোবর ২২, ১৯৫৪ (বঙ্গাব্দ কার্তিক ৫, ১৩৬১)
Share:

নির্মলেন্দু গুণ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ নির্মলেন্দু গুণ জুন ২১,১৯৪৫ সালে (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণায় এক হিন্দু পরিবারে জন্ম নেন। ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মা বিনাপনি ☆☆ জিবীকাঃ কবি, চিত্রশিল্পী ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ তিনি প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে ☆☆ জাতীয়তা: বাঙ্গলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০), না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো , অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩), দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪), চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১), সোনার কুঠার (১৯৮৭), আমার ছেলেবেলা ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী (১৯৮২), একুশে পদক (২০০১), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬)
Share:

নির্মলেন্দু গুণ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ নির্মলেন্দু গুণ জুন ২১,১৯৪৫ সালে (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণায় এক হিন্দু পরিবারে জন্ম নেন। ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মা বিনাপনি ☆☆ জিবীকাঃ কবি, চিত্রশিল্পী ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ তিনি প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে ☆☆ জাতীয়তা: বাঙ্গলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০), না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো , অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩), দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪), চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১), সোনার কুঠার (১৯৮৭), আমার ছেলেবেলা ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী (১৯৮২), একুশে পদক (২০০১), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬)
Share:

নির্মলেন্দু গুণ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ নির্মলেন্দু গুণ জুন ২১,১৯৪৫ সালে (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণায় এক হিন্দু পরিবারে জন্ম নেন। ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মা বিনাপনি ☆☆ জিবীকাঃ কবি, চিত্রশিল্পী ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ তিনি প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে ☆☆ জাতীয়তা: বাঙ্গলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০), না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো , অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩), দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪), চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১), সোনার কুঠার (১৯৮৭), আমার ছেলেবেলা ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী (১৯৮২), একুশে পদক (২০০১), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬)
Share:

নির্মলেন্দু গুণ


☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ নির্মলেন্দু গুণ জুন ২১,১৯৪৫ সালে (আষাঢ় ৭, ১৩৫২ বঙ্গাব্দ) কাশবন, বারহাট্টা, নেত্রকোণায় এক হিন্দু পরিবারে জন্ম নেন। ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা সুখেন্দু প্রকাশ গুণ এবং মা বিনাপনি ☆☆ জিবীকাঃ কবি, চিত্রশিল্পী ☆☆ সাহিত্য ধারাঃ তিনি প্রধানত একজন আধুনিক কবি। শ্রেণীসংগ্রাম, স্বৈরাচার-বিরোধিতা, প্রেম ও নারী তার কবিতার মূল-বিষয় হিসেবে বার বার এসেছে ☆☆ জাতীয়তা: বাঙ্গলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: প্রেমাংশুর রক্ত চাই (১৯৭০), না প্রেমিক না বিপ্লবী (১৯৭২), স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো , অমিমাংসিত রমণী (১৯৭৩), দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী (১৯৭৪), চাষাভুষার কাব্য (১৯৮১), সোনার কুঠার (১৯৮৭), আমার ছেলেবেলা ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী (১৯৮২), একুশে পদক (২০০১), স্বাধীনতা পুরস্কার (২০১৬)
Share:

কামিনী রায়


☆☆ ছদ্ম নামঃ জনৈক বঙ্গমহিলা ☆☆ জিবীকাঃ কবি, সমাজকর্মী, নারীবাদী লেখিকা ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের প্রথম মহিলা স্নাতক ডিগ্রীধারী ব্যক্তিত্ব কামিনী রায়ের জন্ম অক্টোবর ১২, ১৮৬৪ সালে পূর্ববঙ্গের (বর্তমান বাংলাদেশের) বাকেরগঞ্জের বাসণ্ডা গ্রামে (বর্তমানে যা বরিশাল জেলার অংশ)। তাঁর পিতা চন্ডীচরণ সেন একজন ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী, বিচারক ও ঐতিহাসিক লেখক ছিলেন। ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: আলো ও ছায়া (১৮৮৯), মাল্য ও নির্মাল্য (১৯১৩), দীপ ও ধূপ (১৯২৯),জীবন পথে (১৯৩০) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯২৯) ☆☆ দাম্পত্য সংগী: কেদারনাথ রায় ☆☆ মৃত্যুঃ সেপ্টেম্বর ২৭, ১৯৩৩
Share:

সুকান্ত ভট্টাচার্য


☆☆ উপাধিঃ কিশোর কবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট মাতামহের ৪৩,মহিম হালদার স্ট্রীটের বাড়ীতে,কালীঘাট,কলকাতায় তার জন্ম।। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার,বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার, উনশিয়া গ্রামে। ☆☆ জাতীয়তা: ভারতীয় ☆☆ পিতা-মাতা: পিতা-নিবারন ভট্টাচার্য, মা-সুনীতি দেবী। ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), ঘুম নেই (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩) ☆☆ উল্ল্যেখযোগ্য পরিচয়: পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র। ☆☆মৃত্যু: ১৩ই মে, ১৯৪৭
Share:

শামসুর রাহমান


☆☆ জিবীকাঃ কবি, সাঙ্গবাদিক ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা মুখলেসুর রহমান চৌধুরী ও মা আমেনা বেগম। ☆☆ জন্ম: অক্টোবর ২৩, ১৯২৯, (মাহুতটুলি, ঢাকা) ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯২৯-১৯৪৭), পাকিস্তানী (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশী (১৯৭১-২০০৬) ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: প্রথম গান, দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে, মৃত্যু করোটিতে, এলাটিং বেলাটিং ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার,একুশে পদক,স্বাধীনতা পদক,আনন্দ পুরস্কার ☆☆ দাম্পত্য সংগী: জোহরা বেগম ☆☆মৃত্যু: আগস্ট ১৭, ২০০৬
Share:

সুকুমার রায়


☆☆ পুরো নামঃ সুকুমার রায় চৌধুরী ☆☆ ছদন নামঃ উহ্যনাম পণ্ডিত ☆☆ জন্ম : ৩০শে অক্টোবর,১৮৮৭ ☆☆ পরিচয়ঃ তিনি একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে ননসেন্স রাইমের প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক ও নাট্যকার। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়।। ☆☆ পিতা-মাতা: সুকুমার ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের উজ্বল রত্ন উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর ছেলে। সুকুমারের মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে ☆☆ উল্লেখযোগ্য পরিচয়ঃ তিনি প্রখ্যাত চলচিত্র পরিচালক সত্যজিত রায়ের পিতা ☆☆ মৃত্যু: ৩০শে অক্টোবর,১৯২৩
Share:

Monday, May 21, 2018

আল মাহমুদ


☆☆ জীবিকা: কবি, সম্পাদক, সাংবাদিক. ☆☆ জন্ম: ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯৩৬-১৯৪৭), পাকিস্তানী (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশী (১৯৭১-বর্তমান) ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালি কাবিন ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক.
Share:

বেগম সুফিয়া কামাল


☆☆ জীবিকা: কবি, লেখিকা ☆☆জন্ম: ২০শে জুন, ১৯১১ ☆☆ জাতীয়তা: বাংলাদেশী ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: সাঁঝের মায়া, উদাত্ত পৃথিবী ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬২)একুশে পদক (১৯৭৬) স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭). ☆☆দাম্পত্যসঙ্গী: সৈয়দ নেহাল হোসেন (১৯২২-১৯৩২;বিধবা) কামালউদ্দিন আহমেদ (১৯৩৭). ☆☆মৃত্যু: ২০শে নভেম্বর, ১৯৯৯
Share:

ফররুখ আহমদ


☆☆ উপাধিঃ ইসলামী রেনেসার কবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ কবির জন্ম জুন ১০,১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে (তৎকালীন যশোর জেলার অন্তর্গত) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝাইল গ্রামে ☆☆ পিতা-মাতা: বাবা সৈয়দ হাতেম আলী ছিলেন একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর। আর মায়ের নাম রওশন আখতার। ☆☆ জীবিকা: সরকারী চাকুরী,মাসিক মোহাম্মদী পত্রিকা সম্পাদনা,স্টাফ আর্টিস্ট (বেতার) ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: সাত সাগরের মাঝি (ডিসেম্বর,১৯৪৪), সিরাজাম মুনীরা (সেপ্টেম্বর,১৯৫২),নৌফেল ও হাতেম (জুন,১৯৬১),হাতেম তায়ী (মে,১৯৬৬). ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬০), একুশে পদক (১৯৭৭), স্বাধীনতা পদক (১৯৮০) ☆☆ দাম্পত্যসঙ্গী: আপন খালাতো বোন সৈয়দা তৈয়বা খাতুন (লিলি) (নভেম্বর,১৯৪২) ☆☆ মৃত্যু: অক্টোবর ১৯, ১৯৭৪
Share:

জসীম উদ্দীন


☆☆ পুরো নামঃ জসীম উদ্দীন মোল্লা ☆☆ উপাধিঃ পল্লীকবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ তিনি ১৯০৩ সনের পহেলা জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি ছিলো একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। ☆☆ পিতা-মাতা: বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৯০৩-১৯৪৭), পাকিস্তানী (১৯৪৭-১৯৭১), বাংলাদেশী (১৯৭১-১৯৭৬) ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯),সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪),এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬),চলে মুসাফির (১৯৫২) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: একুশে পদক, স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার,রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি. লিট ডিগ্রি (১৯৬৯) ☆☆ মৃত্যু: মার্চ ১৩, ১৯৭৬
Share:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


☆☆ ছদন নামঃ ভানুসিংহ ঠাকুর ☆☆ উপাধিঃ গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ৭ই মে, ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে (২৫ বৈশাখ, ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫) ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯),ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬),কাবুলিওয়ালা, হৈমন্তী, দেনাপাওনা,খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলি (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪) ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (১৯১৩) ☆☆ দাম্পত্য সংগী: মৃণালিনী দেবী (বি. ১৮৭৩–১৯০২) ☆☆মৃত্যু: ৭ই আগস্ট, ১৯৪১ (২২ শ্রাবণ, ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)
Share:

কাজী নজরুল ইসলাম


☆☆ ডাক নামঃ দুখু মিয়া ☆☆ উপাধিঃ বিদ্রোহী কবি ☆☆ জন্ম পরিচয়ঃ ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। ☆☆ পিতা-মাতা: কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান নজরূল ☆☆ জাতীয়তা: ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯-১৯৪৭), ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭৬), বাংলাদেশী (১৯৭২-১৯৭৬) ☆☆ উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ: অগ্নিবীণা (কবিতা) ১৯২২,সঞ্চিতা (কবিতা সংকলন) ১৯২৫, মরুভাস্কর (কবিতা) ১৯৫১,সঞ্চয়ন (কবিতা সংকলন) ১৯৫৫, দোলন-চাঁপা (কবিতা এবং গান) ১৯২৩,বিষের বাঁশি (কবিতা এবং গান) ১৯২৪,ব্যাথার দান (ছোট গল্প) ১৯২২,রিক্তের বেদন (ছোট গল্প) ১৯২৫,বাঁধন হারা (উপন্যাস) ১৯২৭,মৃত্যুক্ষুধা (উপন্যাস) ১৯৩০, ঝিঙ্গে ফুল (প্রবন্ধ) ১৯২৬ ☆☆ উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭),একুশে পদক (১৯৭৬),পদ্মভূষণ ☆☆ দাম্পত্য সংগী: নার্গিস আসার খানম,প্রমিলা দেবী ☆☆ মৃত্যু: আগস্ট ২৯, ১৯৭৬ (ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ)
Share:

Thursday, March 15, 2018

নমরুদের কাহিনী


বেবিলন দেশের নাম হয়তো তোমরা শুনেছো! সেই দেশের সম্রাট নমরূদ ছিলেন যেমন অহঙ্কারী তেমনি অত্যাচারী। রাজকোষে ছিল তাঁর প্রচুর মণিরত্ন, ধন-ঐশ্বর্য-দেহে বীর্য, অগণিত লোক-মস্কর। একবার অগণিত সৈন্যসামন্ত নিয়ে তিনি অভিযানে বের হলেন। দেশের পর দেশ তাঁর করায়ত্ত হতে লাগলো। চারদিকে বয়ে গেলো রক্তের নদী –শোনা যেতে লাগলো নিপীড়িতের আর্তনাদ –দুর্বলের হাহাকার –বুকফাটা ক্রন্দন। তবু বিরাম নাই –বিশ্রাম নাই –শুধু ধ্বংস আর ধ্বংস –জয় আর জয়। গ্রীস, তুরস্ক, আরব, পারস্য ও পাকভারতে তাঁর বিজয়-নিশান উড়তে লাগলো। তিনি হলেন অর্ধ পৃথিবীর একচ্ছত্র অধিপতি। দম্ভে তাঁর বুক উঠলো ফুলে –দুনিয়াটাকে খেলাঘর বলে তাঁর মনে হতে লাগলো। একদিন নমরূদ আম-দরবারে বসে অমাত্য-পারিষদ নিয়ে খোশগল্পে মশগুল আছেন, এমন সময়ে একজন ফকির এসে দরজায় দাঁড়িয়ে হাঁক দিলোঃ সর্বশক্তিমান খোদার নামে কিছু দান করুন জাঁহাপনা। নমরূদ এ কথা শুনে চমকে উঠলেন। বললেনঃ সর্বশক্তিমান খোদা? সে কি বলছো তুমি? সর্বশক্তিমান আমি। সম্রাটের কথার ওপরেকথা চলে না –সুতরাং অমাত্যবর্গ ক্ষুণ্ণমনে নীরব হয়ে রইলেন। ফকির বললোঃ জাহাঁপনা আপনি ভুল করছেন –এমন পাপকথা মুখে উচ্চারণ পর্যন্ত করতে নেই। তিনি এতো বিরাট যে, তাঁর তুলনায় আপনি অতিশয় তুচ্ছ। নমরূদ ক্রুব্ধকণ্ঠে চীৎকার করে উঠলেনঃ এতো বড় স্পর্ধা! আমার কথার ওপরে কথা!! প্রতিহারী- প্রতিহারী এসে জোড়হাতে আদেশের প্রতীক্ষা করতে লাগলোঃ নমরূদ ক্ষিপ্তকণ্ঠে হুকুম করলেনঃ এই ভিখারীর গর্দান চাই। প্রতিহারী ফকিরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে শিরচ্ছেদের জন্য বধ্যভূমিতে নিয়ে গেলো। অমাত্যবগ্য তাঁদের সম্রাটকে চিনতেন, তাই তাঁরা বিন্দুমাত্র বিস্মিত হলেন না; কিন্তু মনে মনে দুঃখ বোধ করতে লাগলেন। নমরূদ সভাসদদের ডেকে বললেনঃ আপনারা আমার রাজ্য মধ্যে প্রচার করে দিন, আমি সর্বশক্তিমান –আমি খোদা। যে আমাকে ছাড়া অন্য খোদার বন্দনা করবে সে সবংশে ধ্বংস হবে। অমাত্যগণ নিরুপায়। তাঁরা তখনই রাজাদেশ দেশে দেশে, নগরে নগরে, গ্রামে গ্রামে ঢাক পিটিয়ে প্রচার করে দেবার ব্যবস্থা করলেন। দেশের লোকেরা আতঙ্কে শিউরে উঠলো। অন্তঃপুরে মেয়েরা কানে আঙ্গুল দিলো। সামান্য মানুষের এমন স্পর্ধা। বামন হয়ে আকাশে খেলাঘর নির্মাণের সাধ! কিন্তু প্রতিকার নেই। গোপনে গোপনে তারা উপাসনা করতে লাগলো। প্রকাশ্যে নমরূদের আদেশ পালন করবার ভান করা ছাড়া কোনো উপায় রইলোনা। নমরূদ অহঙ্কারে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন; সুতরাং দিনে দিনে স্পর্ধা তাঁর বেড়েই চলেছিলো। আপনার নানা রকমের মূর্তি নির্মাণ করিয়ে প্রাসাদের এক প্রকোষ্ঠে রেখে দিয়ে রাজধানীর সকলের ওপরে আদেশ দিলেনঃ দুধ আরকলা দিয়ে আমারমূর্তি পূজা করতে হবে। যে আদেশ অমান্য করবে তার গর্দান যাবে। প্রাণের দায়ে সবাই নমরূদের খেয়াল অনুসারেই চলতে লাগলো। নমরূদের অনুগত ভৃত্য অজর প্রভু-অন্তপ্রাণ। তাঁর দ্বাদশ বৎসর বয়স্ক পুত্র ইবরাহিম একদিন এমন কাজ করলেন যা দেখে আতঙ্কে সকলের বাকরোধ হবার উপক্রম হলো। নমরূদ সৈন্যসামন্ত নিয়ে বেরিয়েছিলেন কোনো উৎসবে যোগদান করতে। প্রাসাদে ফিরে এসে দেখতে পেলেন তাঁর প্রতিমূর্তিগুলো ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত। নমরূদ সেদিক পানে চেয়ে বজ্রগম্ভীর স্বরে চিৎকার করে বললেনঃ কে এ কাজ করলো? ইবরাহিম নির্ভয়ে এগিয়ে এলেন। বললেনঃ আমি করেছি। সকলে বালকের দুঃসাহস দেখে বিস্মিত হলো। এই নির্ভীকতার যে কী পরিণাম, তা কল্পনা করে সকলে শিউরে উঠলো। মনরূদ ভ্রু কুঞ্চিত করে প্রশ্ন করলেনঃ কেন? কেন করলে? ইবরাহিম সাহসে বুক ফুলিয়ে বললেনঃ যে সামান্য মানুষ হয়ে খোদা হবার স্পর্ধা করে তাঁর শাস্তি দিয়েছি। এখনো সবাধান হোন জাহাঁপনা –নইলে খোদা আপনাকে ক্ষমা করবেন না। অমাত্যবর্গ অবাক। এতো বড় উচিত কথা মুখের ওপর কেউ কোনদিন তাঁকে বলেনি। নমরূদ হুঙ্কার দিলেনঃ এই, কে আছিস? মুক্ত তরবারি হস্তে প্রতিহারী এসে কুর্ণিশ জানালো। নমরূদ হুকুম করলেন। এই মুহুর্তে এর গর্দান চাই। জল্লাদের হাতের অস্ত্র উজ্জ্বল আলোকে ঝলমল করে উঠলো। নমরূদ তাকে থামবার ইঙ্গিত জানিয়ে দু’হাত আন্দোলিন করে বললেনঃ না-না না, বধ করো না –এত আরামে এর মৃত্যু হতে পারে না। একে আগুনে দগ্ধ করে হত্যা করতে হবে। তোমরা সবাই কাঠের যোগাড় করো। জীবন্ত মানব দগ্ধ করা একটা কৌতূককর ব্যাপার। সুতরাং লোক-লস্কর, পাইক-সেপাই বনবাদাড় উজাড় কলে শহরের বাইরে এক ময়দানে কাঠ স্তূপ করতে লাগলো। কিছুকাল পরে একটি নির্দিষ্ট দিনে বিরাট স্তূপীকৃত কাঠের ওপরে ঘি ঢেলে এমন অগ্নিকুণ্ড করা হলো যার তাপে এক মাইলের মধ্যে প্রবেশ করা দুঃসাধ্য ব্যাপার। আগুন দাউ-দাউ করে জ্বলছে –নমরূদ সেদিক পানে চেয়ে চিৎকার করে বললেনঃ শীঘ্রই ইবরাহিমকে আগুনের মধ্যে ফেলে দাওঃ সিপাহী-শাস্ত্রী করজোড় নিবেদন করলোঃ জাঁহাপনা, আধমাইলের মধ্যে যে সব পাখি উড়ছিলো তার অবধি পুড়ে মরে গেছে। আগুনের নিকটবর্তী না হলে কি করে আমরা ইবরাহিমকে ওর মধ্যে ফেলতে পারি। নমরূদ দেখলেন কথাটা সত্য, কিন্তু তথাপি মুখ বিকৃত করে চিৎকার করে উঠলেনঃ তবে কি তাকে রেহাই দিতে চাও নাকি? কাঠের সঙ্গে কাঠ বেঁধে চরকির মতো তৈরি করো –তার সঙ্গে ইবরাহিমকে বেঁধে দূর থেকে নিক্ষেপ করো। ঠিক-ঠিক, একথাটা কারুর মনেই হয়নি। ইবরাহিমকে আগুনে ফেলতে না পেরে উৎসাহটা কেমন ঝিমিয়ে এসেছিলো। সুতরাং এবার সকলেই পৈমাচিক আনন্দে করতালি দিয়ে উঠলো। নমরদের হুকুম মতো চরকির কাঠের আগায় ইবরাহিমকে বেঁধে কয়েক পাক ঘুরিয়ে দূর থেকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়া হলো। কিন্তু আশ্চর্য, যে প্রচণ্ড আগুনের লেলিহান শিখা এতক্ষণ দাউ-দাউ করে জ্বলছিলো –ইবরাহিম আগুনে পড়বামাত্র আগুনের ফুলকিগুলো বিচিত্র রঙের ফুলে পরিণত হলো। যে সকল কাঠ অগ্নিদগ্ধ হয়ে একেবারে ছাই হয়ে গিয়েছিল মুহুর্ত মধ্যে সেগুলো পত্র পুষ্প ভরে উঠলো। দেখতে দেখতে সেই ভীষণ অগ্নিকুণ্ড পুষ্প উদ্যানে পরিণত হলো। তার মধ্যে ইবরাহিম কাণ্ড দেখে বিস্ময়ে একেবারে হতবাক হয়ে গেলেন। কিন্তু সে মুহুর্তের জন্যই –পরক্ষণেই চীৎকার করে বললেনঃ হতভাগাকে পাথর ছুঁড়ে মেরে ফেলো। নমরূদের হুকুম পেলে লক্ষ লক্ষ লোক তাঁর দিকে পাথর ছুঁড়ে মারতে লাগলো, কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় যে, একটা পাথরের কণাও তাঁর গায়ে আঘাত করলো না –সব পাথর জমাট বেঁধে মেঘের রূপ ধরে ইবরাহিমের মাথার উপরে ছায়া করে রইলো। ব্যাপার দেখে নমরূদ বুঝতে পারলেন অনুচরবর্গকে বেশি দিন শক্তিসামর্থের কথা গায়ের জোরে বিশ্বাস করানো চলবে না –কিন্তু বাইরে সে কথা প্রকাশ করলেন না। বললেনঃ ও ছোকরা যাদু জানে –যাদুবিদ্যার গুণে এসব করছে। ইবরাহিম আগুন থেকে বেরিয়ে এসে নমরূদকে ডেকে উচ্চকণ্ঠে বললেনঃ দেখরেন জাঁহাপনা খোদা যাকে রক্ষা করেন –কেউ তাকে মারতে পারে না। তাই বলছি, অহঙ্কার ত্যাগ করে খোদার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন। নমরূদ বিরস কণ্ঠে বললেনঃ তোর খোদার নিকট তো কিছু আমি চাই না, তবে নিরর্থক তাকে মানতে যাবো কেন? ইবরাহিম বললেনঃ এখন চান না বটে, কিন্তু আপনাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি –এই সাম্রাজ্য তিনিই আপনাকে দিয়েছেন। তিনি ইচ্ছা করলে এই মুহুর্তে আপনাকে ধ্বংস করতে পারেন। নমরূদ ক্রোধে সিংহাসক থেকে লাফিয়ে উঠলেন। হুঙ্কার ছাড়লেনঃ এতো বড় স্পর্ধা! তোর খোদা আমাদের ধ্বংস করবে। শোন ইবরাহিম তোর খোদাকে খুন করে আমি তার রাজ্য কেড়ে নেবো। কিন্তু খোদা যে আকাশে থাকেন এই নিয়েই বাঁধলো গোল, সেখানে যাওয়া যাবে কি উপায়ে তাই হলো নমরূদের চিন্তার বিষয়। মন্ত্রীদের নিয়ে পরামর্শ-সভা বসলো। অনেক বাদানুবাদ এবং বিতর্কের পর মন্ত্রীরা একমত হয়ে অভিমত প্রকাশ করলেন, যদি চারিটি শুকুনি সংগ্রহ করা যায়, তবে একটি জলচৌকির চারি-পাশে তাদের বেঁধে প্রত্যেকের মুখের সম্মুখে কিছু দূরে মাংসখণ্ড ঝুলিয়ে রাখলেই তারা মাংসের লোভে ওপরের দিকে উঠতে থাকবে –তাহলে আকাশের ওপরে খোদার দেশে যেতে পারা যাবে। যুক্তিটা নমরূদের মনঃপুত হলো। তিনি তৎক্ষণাৎ শকুনি ধরে আনবার জন্যে সিপাহী-শাস্ত্রীর ওপরে হুকুম করলেন। গোটা চারেক শকুনি অত অল্প দিনেই সংগৃহীত হলে গেলো। অতঃপর নমরূদ একদিন প্রচার করলেন, তিনি খোদাকে হত্যা করবার জন্য আকাশে উঠবেন। এই অভাবনীয় কাণ্ড দেখবার জন্যে রাজ্যের চারিদিক থেকে দলে দলে লোক প্রাসাদ-প্রাঙ্গণে সমবেত হলেন। যথাসময়ে জলচৌকির চারটা খুঁটির সঙ্গে শকুন চারটাকে বেঁধে মুখের খানিকটা ওপর মাংসখণ্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হলো নমরূদ দু’জন সঙ্গী নিয়ে সেই চৌকির ওপরে গিয়ে বসলেন। শকুনগুলো মাংসের লোভে উড়তে শুরু করলো। উড়তে উড় মেঘলোক পার হয়ে আরো ওপরে –আরো ওপরে –এত ওপরে উঠলো যে, পৃথিবীকে একটা ধোঁয়ার মতো মনে হতে লাগলো। নমরূদ নিচের দিকে চেয়ে শিউরে উঠলেন। যদি দড়ি ছিঁড়ে জলচৌকিটা পড়ে যায় –কী যে দশা ঘটবে ভাবতেই বুক কেঁপে ওঠে। কিন্ত সঙ্গী দু’জনের কাছে তাঁর ভয়ের কথা তিনি গোপন করলেন। বললেনঃ আমরা তবে এবার ইবরাহিমের খোদার রাজ্যে এসেছি। শুনেছি তাকে দেখতে পাওয়া যায় না। তাও নাই বা গেলো-চারিদিকে তীর ছুঁড়ি, যেখানেই থাকে –দফা ঠাণ্ডা হবে। এইবলে তিনি চারদিকে তীর ছুঁড়তে শুরু করলেন। খোদাতা’লা স্বর্গদূত জিবরাইলকে বললেনঃ নমরূদ অনেক আশা করে আমাকে বধ করতে এসেছে। যে আমার নিকট যা চেয়েছে আমি তাকে তা দিয়েছি। তুমি নমরূদের তীরগুলো ধরে প্রত্যেক ফলকের আগায় মাছের রক্ত মাখিয়ে নমরূদকে ফিরিয়ে দাও। তাকে নিরাশ করো না। খোদার আদেশ মতো স্বর্গদূত জিবরাইল মৎস্যের নিকটে রক্ত চাইতে গেলো। মৎস্য বললোঃ খোদা যেন আমাকে ক্ষমা করেন, একজন ধর্মদ্রোহীতার জন্য রক্ত দিতে আমি স্বীকৃত নই। জিবরাইল বললেনঃ তুমি রক্ত দান কর। দয়ালু খোদা তার প্রতিদানের এই সুযোগ তোমাকে প্রদান করবেন, কোন পশু জীবিতাবস্থায় বধ না করলে মানবগণ তার মাংস আহার করবে না, কিন্তু তুমি জীবিক বা মৃত অবস্থাতেই মানবের ভক্ষ্য হবে। চিংড়ী, বেলে ইত্যাদি মৎস্য আনন্দের সঙ্গে স্বীকৃত হয়ে রক্ত দান করলো। সেদিন হতে তাদের দেহ আজ অবধি রক্তহীন, তোমরা লক্ষ্য করলেই বুঝতে পারবে। নমরূদের চৌকির উপর রক্তমাখা তীর এসে পড়তে লাগলো। তীরের অগ্রভাবে রক্ত দেখে আনন্দে তিনি উৎফুল্লা হয়ে উঠলেন। তাঁর শত্রু-তার প্রতিদ্বন্দ্বী খোদা তবে মারা পড়েছেন! যাক –এতদিনে নিষ্কণ্টক হওয়া গেল। নমরূদ নিচে নামবার জন্য মাংসের টুকরোগুলো শকুনির মুখের নিচে ঘুরিয়ে দিলেন। শকুনিগুলো শাঁ-শাঁ শব্দে পৃথিবীর দিকে দ্রুত বেগে নেমে এলো। নমরূদ মাটিতে নেমে রক্তমাখা তীরগুলো সমবেত প্রজাদের দেখিয়ে বললেনঃ ইবরাহিমের খোদাকে আমি হত্যা করে এসেছি। এই দেখ তীরের আগায় তাঁর দেহের রক্ত। সকলে একবাক্যে তাঁকে ধন্য ধন্য করতে লাগলো। ইবরাহিমও সেই জনতার মধ্যে ছিলেন। তিনি নমরূদের সমুখে এগিয়ে এলেন। বললেনঃ খোদাকে কেউ কখনো হত্যা করতে পারবে না। নমরূদ খুশীভরা কণ্ঠে বললেনঃ মূর্খ ইবরাহিম, বিশ্বাস কর –এইমাত্র তাঁকে বধ করে আমি ফিরছি। তোর বিশ্বাস না হয় –তাঁকে ডেকে দ্যাখ –তিনি কেমন করে তোর কাছে আসেন দেখি। ইবরাহিম জবাব দিলেনঃ তাঁকে কোথাও যেতে আসতে হয় না –তিনি সব জায়গাতেই সব সময়ে রয়েছেন। নমরূদ বললেনঃ বিশ্বাস করলি না ইবরাহিম? তোর খোদা যদি জীবিতই থাকেন তবে তাঁকে বল সৈন্যসামস্ত যোগাড় করতে –আমি তাঁর সঙ্গে যুদ্ধ করবো। ইবরাহিম প্রত্যুত্তর করলেনঃ তাঁর সন্য সর্বদা প্রস্তুত, আপনি বরঞ্চ প্রস্তুত হোন। যখন বলবেন তখনই তিনি রাজি। এ কথায় নমরূদ মনে মনে ভীত হলেন –সত্যই কি তবে ইবরাহিমের খোদা মারা যাননি। সেদিন হতে নমরূদ সৈন্য সংগ্রহে মনোনিবেশ করলেন। বহু নতুন সৈন্য নিযুক্ত হতে লাগলো। নমরূদ তাঁর অধীন রাজন্যবর্গের নিকটে সৈন্য চেয়ে পাঠালে অল্প দিনের মধ্যে লক্ষ লক্ষ সেনা সংগৃহীত হয়ে গেলো। ইবরাহিম খোদার নিকট আবেদন জানালেনঃ হে নিখিল পতি, হে সর্বশক্তিমান একজন সামান্য মানুষ তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী। তুমি তাকে সাজা দিয়ে সমগ্র ধর্মদ্রোহীকে বুঝিয়ে দাও, তোমার বিরুদ্ধাচরণ যারা করে তারা তোমার রোষ থেকে ক্ষমা পায় না। হে প্রভু, যদি তাদের ক্ষমা করো তবে তোমাকে যে কেউ মানতে চাইবে না। তাকে শাস্তি দেবার জন্যে আমাকেও সাহায্য করো। এই আবেদনের প্রত্যুত্তরে দৈববাণী শুনতে পাওয়া গেলঃ কিরূপ শাস্তি তুমি পছন্দ করো –কি সাহায্য তুমি চাও? ইবরাহিম বললেনঃ তুমি সর্বজ্ঞ, তোমাকে নতুন করে কি বলবো প্রভু! তবে আমার ইচ্ছা, তুমি তোমার সৃষ্টির অতি ক্ষুদ্র এবং অতি দুর্বল প্রাণী দিয়ে নমরূদের সৈন্যগণকে হত্যা করো। ধর্মদ্রোহীরা বুঝুক, তোমার লীলা কি বিচিত্র –কত রহস্যময়। পুনরায় দৈববাণী হলোঃ তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হবে। এদিকে নমরূদ ইবরাহিমকে যথাসময়ে সংবাদ পাঠালেন তাঁর সৈন্য প্রস্তুত –এবার তিনি খোদার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে ইচ্ছা করেন। এই সংবাদ শুনে ইব্রাহিম নির্দিষ্ট দিনে যুদ্ধক্ষেত্রে নমরূদের সৈন্যরা যেখানে খোদার প্রেরিত সৈন্যের জন্য অপেক্ষা করছিলো, সেখানে এলেন। নমরূদকে ডেকে বললেনঃ খোদার সৈন্য এবারে যুদ্ধে আসছে –আপনারা প্রস্তুত হোন। নমরূদ এবং তাঁর সৈন্যরা চেয়ে দেখলো দূরে ‘কাফ’ পর্বতের গায়ে অসংখ্য ছিদ্র –সেই ছিদ্র হতে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি মশা ভন ভন শব্দে আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রের দিকে উড়ে আসতে শুরু করেছে। নমরূদ তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলেন। বললেনঃ ইব্রাহিম পালে পালে মশা আসছে দেখতে পাচ্ছি। ঐ কি তোমার খোদার সৈন্য। ইব্রাহিম বললেনঃ ওরাই খোদার সৈন্য, ওদের অস্ত্রই আপনার সৈন্যগণ আগে সহ্য করুক –পরে অন্যরূপ ব্যবস্থা হবে। নমরূদ অবজ্ঞাভরে বললেনঃ তবে যুদ্ধ আরম্ভ হোক। তাঁর আদেশ পেয়ে যুদ্ধের বাজনা বেজে উঠলো। অমনি মশারা নমরূদের লোক-লস্করের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়লো। এক একটি মশা একজন সৈন্যের নাকের ছিদ্রপথে মস্তকে প্রবেশ করে এমন বিষম কামড় দিতে আরম্ভ করলো যে, তারা যন্ত্রণায় নাচতে শুরু করলো। যাতনা সহ্য করতে না পেরে হাতের গদা দিয়ে তারা পরস্পরের মাথায় আঘাত করতে লাগলো। নিদারুণ আঘাতে অনেকেই ভূমিশয্যা গ্রহণ করলো। কিন্তু পালিয়ে যাবে কোথায়। দলে দলে মশা তাদের মাথার ওপরে ভন ভন করতে করতে যেতে লাগলো। একে একে সমস্ত সৈন্যের জীবনলীলা এমনি করে শেষ হলো। বেগতিক দেখে নমরূদও যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালাতে যাচ্ছিলেন এমন সময়ে সুডুৎ করে একটা মশা তাঁর নাকের মধ্যে প্রবেশ করলো। যন্ত্রনায় অধীর হয়ে তিনি প্রাসাদের দিকে ছুটে চললেন। প্রসাদে প্রবেশ করে তিনি হেকিমকে হুকুম করলেন মস্তক থেকে মশা বের করে দিতে। শত রকমের ওষুধ সহস্র রকমের প্রক্রিয়া –কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। মশার কামড়ের যন্ত্রনায় প্রাণ যায় আর কি‍! নমরূদ কাতর হয়ে পড়লেন। একজন প্রহরীকে মাথায় কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে আঘাত করতে হুকুম করলেন। আঘাত করাতে কিছুটা যেন আরাম বোধ হলো মনে করলেন। সুতরাং এই উপায়েই রোগের চিকিৎসা চলতে লাগলো। যতক্ষণ আঘাত করা যায় ততক্ষণ মশাটা চুপ করে থাকে –আঘাত বন্ধ হলে মশাটা কামড়াতে শুরু করে। এই ভাবে কাটতে লাগলো। আহার নেই –শয়ন নেই –নিদ্রা নেই –অবিরাম আঘাত চলতে থাকলো। এই ঘটনার চল্লিশ দিন পরে ইব্রাহিম একদিন এসে নমরূদকে বললেনঃ শাহানশাহ নমরূদ, আপনি করুণাময় খোদার নিকটে আপনার কৃত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। তিনি পরম দয়ালু –আপনাকে নিশ্চয়ই ক্ষমা করবেন। আপনি এই দারুণ যন্ত্রণা হতে মুক্তি পাবেন। নমরূদ ইব্রাহিমের কথা গ্রাহ্য মাত্র করলেন না। বললেনঃ চল্লিশ দিন তো সামান্য –যদতিন জীবন আছে ততদিন যদি এমনি কষ্ট ভোগ করি তথাপি তোর খোদার কাছে ক্ষমা চাইবো না –তোর খোদাকে মানবো না। ইব্রাহিম বললেনঃ আপনি খোদাকে মানেন না বটে, কিন্তু আপনার ঘরবাড়ি আসবাবপত্র যা আপনি দেখছেন সকলেই তাঁর বন্দনা করে। নমরূদ অত্যন্ত সবলকণ্ঠে বললেনঃ কখনো নয়। ইব্রাহিম বললেনঃ শুনুন তবে। তন্মুহূর্তে প্রাসাদের চারদিক থেকে শব্দ হতে লাগলোঃ ‘খোদা এক এবং অদ্বিতীয়, ইব্রাহিম তাঁর বন্ধু’। নমরূদ বললেনঃ ইব্রাহিম তুমি যাদু জানো। ইব্রাহিম জবাব দিলেনঃ সকল যাদুর যিনি অধিপতি এসব তাঁর দ্বারাই সম্ভব। নমরূদ অত্যন্ত রুষ্ট হয়ে আদেশ করলেনঃ এই প্রাসাদ, এই আসবাবপত্র –এই ব্যাবিলন পুড়িয়ে দাও। প্রহরীরা ইতস্ততঃ করতে লাগলো। কিন্তু নমরূদ পুনরায় গর্জন করে উঠতে তারা শহরের চারিদিকে আগুন ধরিয়ে দিলো। আগুনের লেলিহান শিখা আকাশ স্পর্শ করলো। নমরূদ নিষ্পলক দৃষ্টিতে সেই উজ্জ্বল অগ্নির দিকে চেয়ে রইলেন। ইব্রাহিম বললেনঃ ব্যাবিলন পুড়ে গেল বটে, কিন্তু আপনার গায়ের জামা-কাপড় আপনার হাত-পা সবাই তো খোদাকে মানে। নমরূদ শুনতে পেলেন, সত্যই তাঁর দেহের বস্ত্রখণ্ড হতে –পদযুগল হতে শব্দ উত্থিত হচ্ছেঃ ‘খোদা এক এবং অদ্বিতীয়, ইব্রাহিম তাঁর বন্ধু’। নমরূদ জামা খুলে জ্বলন্ত আগুনে ফেলে দিলেন। কোষ থেকে তরবারি মুক্ত করে আঘাত করতেই দেহ থেকে পা-দুটো বিচ্ছিন্ন হয়ে লাফাতে লাগলো। তবু পাপাচারী নমরূদের মুখে খোদার নাম উচ্চারিত হলো না। ইব্রাহিম অনুরোধ করলেনঃ এখনো আপনি খোদার স্মরণ নিন তিনি আপনাকে শান্তি দিবেন। নমরূদের জিদ অত্যন্ত প্রবল। বিকৃত কণ্ঠে বললেনঃ ও-সব বুজরুকি আমার কাছে চলবে না। কিছুক্ষণ পরে হতভাগ্যের দেহ ধূলায় লুটিয়ে পড়লো। তাঁর দম্ভ, অহঙ্কার, অভিমান বাতাসে মিশে গেলো। বিহি হাজেরা কাঁদে দূর মরু ময়দানে, ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ তাঁরে ত্যাজে কোন প্রাণে। সারা ও হাজেরা বিবি সতীন দুইজন, হাজেরাকে ইব্রাহিম দেন নির্বাসন; মরু আরবের ময়দানে একা কাঁদিছে হায়! ধূ ধূ বালু-পানি হায় নাহি কোন খানে। ‘পানি কোথা পানি দাও’ পানি বলি ফুকারে নারী; পিপাসায় প্রাণ বাহিরায় –কোথায় বারী। দেহ পুড়ে যায় সাহারার ‘লু’ হাওয়ায় আগুন ঢালিছে রোদ প্রাণ বুঝি যায়- থৈ-থৈ জ্বলে বালু-বালুর সাগর, মরীচিকা মনে হয় ওই সরোবর, অভাগী ছুটিয়া যায় পানির সন্ধানে। নয়নে অশ্রু নাই-দেহ ফেটে লহু বুঝি ঝরে, এক ফোঁটা পানি দাও –কলিজা বিদরে! শিশু ইসমাইল পড়ে মাটিতে লুটায় হাত পা ছুঁড়িয়া শিশু খেলা করে তায়, পায়ের আঘাতে তার জমিন ফাটিয়া পানির ঝরনা-ধারা আসে বাহিরিয়া, হাজেরা শোকর করে খোদা মেহেরবানি। হাজেরা বিবি সেই ‘আবে জম্ জম্’ পান করে প্রাণ বাঁচালেন। সংগৃহীত কোরাণের গল্প-বন্দে আলী মিয়া
Share:

মদিনার পথে


রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কার কুরাইশদের অত্যাচার-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে সেখান থেকে অন্যত্র হিজরতের জন্য আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকেন। অবশেষে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ আসলে তিনি আবূবকর (রাঃ)-কে সাথে নিয়ে মদীনার পথে রওয়ানা হন। পিছনে শত্রু, সামনে বন্ধুর পথ। এমতাবস্থায় আল্লাহর উপর সুদৃঢ় আস্থা ও নিশ্চিন্ত ভরসা রেখে সম্মুখে অগ্রসর হন। অবশেষে পৌঁছে যান মনযিলে মাকছূদে। এদিকে রাসূলের আগমন বার্তা শুনে এতদিন যারা ছিল অপেক্ষমান, তাদের প্রতীক্ষার প্রহর শেষ হয়। মদীনায় বয়ে যায় আনন্দের বান। মদীনার পথে রাসূল (ছাঃ)-এর বিপদসংকুল দীর্ঘ সফরের বর্ণনা সম্পর্কে এ হাদীছ।- নবীপত্নী আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার মাতা-পিতাকে কখনো ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন পালন করতে দেখিনি এবং এমন কোন দিন কাটেনি যেদিন সকালে কিংবা সন্ধ্যায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের বাড়িতে আসেননি। যখন মুসলমানগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়লেন, তখন আবূবকর (রাঃ) হিজরত করে আবিসিনিয়ায় যাওয়ার জন্য বের হ’লেন। শেষে ‘বারকুল গিমাদ’ পৌঁছলে ইবনু দাগিনার সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল তার গোত্রের নেতা। সে বলল, হে আবূবকর! কোথায় যাচ্ছেন? উত্তরে আবূবকর (রাঃ) বললেন, আমার স্ব-জাতি আমাকে বের করে দিয়েছে। তাই আমি মনে করছি, পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াব এবং আমার প্রতিপালকের ইবাদত করব। ইবনু দাগিনা বলল, হে আবূবকর! আপনার মত ব্যক্তি (দেশ থেকে) বের হ’তে পারেন না এবং আপনাকে বের করেও দেয়া যেতে পারে না। আপনি তো নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করে দেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমদের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করে থাকেন এবং সত্য পথের পথিকদের বিপদাপদে সাহায্য করেন। সুতরাং আমি আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছি, আপনাকে যাবতীয় সহযোগিতার ওয়াদা করছি। আপনি ফিরে যান এবং নিজ শহরে আপনার রবের ইবাদত করুন। আবূবকর (রাঃ) ফিরে আসলেন। তাঁর সঙ্গে ইবনু দাগিনাও আসল। ইবনু দাগিনা বিকাল বেলা কুরাইশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে গেল এবং তাদেরকে বলল, আবূবকরের মত লোক দেশ থেকে বের হ’তে পারে না এবং তাকে বের করেও দেয়া যায় না। আপনারা কি এমন ব্যক্তিকে বের করবেন, যিনি নিঃস্বদের জন্য উপার্জন করেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন, অক্ষমের বোঝা নিজে বহন করেন, মেহমানদের আপ্যায়ন করেন এবং ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে বিপদ আসলে সাহায্য করেন। ইবনু দাগিনার আশ্রয়দান কুরাইশরা মেনে নিল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে বলল, তুমি আবূবকরকে বলে দাও, তিনি যেন তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করেন। ছালাত সেখানেই আদায় করেন, ইচ্ছা মাফিক কুরআন তিলাওয়াত করেন। কিন্তু এর দ্বারা আমাদের যেন কষ্ট না দেন। আর এসব ব্যাপার যেন প্রকাশ্যে না করেন। কেননা আমরা আমাদের মেয়েদের ও ছেলেদের ফিতনায় পড়ে যাওয়ার ভয় করি। ইবনু দাগিনা এসব কথা আবূবকর (রাঃ)-কে বলে দিলেন। সে মতে কিছুকাল আবূবকর (রাঃ) নিজের ঘরে তাঁর রবের ইবাদত করতে লাগলেন। ছালাত প্রকাশ্যে আদায় করতেন না এবং ঘরেই কুরআন তিলাওয়াত করতেন। এরপর আবূবকরের মনে খেয়াল জাগল। তাই তিনি তাঁর ঘরের পার্শ্বেই একটি মসজিদ তৈরী করে নিলেন। এতে তিনি ছালাত আদায় করতে ও কুরআন পড়তে লাগলেন। এতে তাঁর কাছে মুশরিকা মহিলা ও যুবকরা ভীড় জমাতে লাগল। তারা আবূ বকর (রাঃ)-এর একাজে বিস্ময়বোধ করত এবং তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকত। আবূবকর (রাঃ) ছিলেন অধিক ক্রন্দনকারী ব্যক্তি, তিনি যখন কুরআন পড়তেন তখন তাঁর অশ্রু সামলিয়ে রাখতে পারতেন না। এ ব্যাপারটি মুশরিকদের নেতৃস্থানীয় কুরাইশদের ভীত করে তুলল এবং তারা ইবনু দাগিনাকে ডেকে পাঠাল। সে আসলে তারা তাকে বলল, তোমার আশ্রয় প্রদানের কারণে আমরাও আবূবকরকে আশ্রয় দিয়েছিলাম এই শর্তে যে, তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর ঘরে করবেন। কিন্তু সে শর্ত তিনি ভঙ্গ করেছেন এবং নিজ গৃহের পাশে একটি মসজিদ তৈরী করে প্রকাশ্যে ছালাত ও তিলাওয়াত শুরু করেছেন। আমাদের ভয় হচ্ছে, আমাদের মহিলা ও সন্তানরা ফিতনায় পড়ে যাবে। কাজেই তুমি তাঁকে নিষেধ করে দাও। তিনি তাঁর রবের ইবাদত তাঁর গৃহের ভিতর সীমাবদ্ধ রাখতে চাইলে, তিনি তা করতে পারেন। আর যদি তিনি তা অমান্য করে প্রকাশ্যে তা করতে চান, তবে তাঁকে তোমার আশ্রয় প্রদান ও দায়-দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে বল। আমরা তোমার আশ্রয় দানের ব্যাপারে বিশ্বাসঘাতকতা করা অত্যন্ত অপসন্দ করি। আবার আবূবকরকেও এভাবে প্রকাশ্যে ইবাদত করার জন্য ছেড়ে দিতে পারি না। আয়েশা (রাঃ) বলেন, ইবনু দাগিনা এসে আবূ বকর (রাঃ)-কে বলল, আপনি অবশ্যই জানেন যে, কী শর্তে আমি আপনার জন্য ওয়াদাবদ্ধ হয়েছিলাম। আপনি হয় তাতে সীমিত থাকবেন, অন্যথা আমার যিম্মাদারী আমাকে ফেরৎ দিবেন। আমি একথা মোটেই পসন্দ করি না যে, আমার সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং আমার আশ্রয়প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রতি আমার বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ আরববাসীর নিকট প্রকাশিত হোক। আবূবকর (রাঃ) তাকে বললেন, আমি তোমার আশ্রয় তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। আমি আমার আল্লাহর আশ্রয়ের উপর সন্তুষ্ট আছি। এ সময় নবী করীম (ছাঃ) মক্কায় ছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) মুসলমানদের বললেন, আমাকে তোমাদের হিজরতের স্থান (স্বপ্নে) দেখানো হয়েছে। সে স্থানে খেজুর বাগান রয়েছে এবং তা দু’টি পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত। এরপর যাঁরা হিজরত করতে চাইলেন, তাঁরা মদীনার দিকে হিজরত করলেন। আর যাঁরা হিজরত করে আবিসিনিয়ায় চলে গিয়েছিলেন, তাঁদেরও অধিকাংশ সেখান হ’তে ফিরে মদীনায় চলে আসলেন। আবূবকর (রাঃ)ও মদীনায় যাওয়ার প্রস্ত্ততি নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর। আশা করছি আমাকেও অনুমতি দেয়া হবে। আবূবকর (রাঃ) বললেন, আমার পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আপনিও হিজরতের আশা করছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আবূবকর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাহচর্য পাওয়ার জন্য নিজেকে হিজরত হ’তে বিরত রাখলেন এবং তাঁর নিকট যে দু’টি উট ছিল এ দু’টিকে চার মাস পর্যন্ত বাবলা গাছের পাতা খাওয়াতে থাকেন। ইবনু শিহাব উরওয়াহ (রাঃ) সূত্রে আয়েশাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ইতিমধ্যে একদিন আমরা ঠিক দুপুর বেলায় আবূবকর (রাঃ)-এর ঘরে উপবিষ্ট ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি এসে আবূবকরকে খবর দিল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাথা আবৃত অবস্থায় আসছেন। সেটা এমন সময় ছিল যে, এ সময় তিনি পূর্বে কখনো আমাদের এখানে আসেননি। আবূবকর (রাঃ) তাঁর আসার কথা শুনে বললেন, আমার মাতাপিতা তাঁর প্রতি কুরবান হোক। আল্লাহর কসম! তিনি এ সময় নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ কারণেই আসছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পৌঁছে অনুমতি চাইলেন। তাঁকে অনুমতি দেয়া হ’ল। ঘরে প্রবেশ করে নবী করীম (ছাঃ) আবূবকরকে বললেন, এখানে অন্য যারা আছে তাদের বের করে দাও। আবূবকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতামাতা আপনার প্রতি কুরবান হোক! এখানে তো আপনারই পরিবার। তখন তিনি বললেন, আমাকেও হিজরতের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আবূ বকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আমি আপনার সফরসঙ্গী হ’তে ইচ্ছুক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঠিক আছে। আবূবকর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমার পিতামাতা আপনার জন্য কুরবান হোক! আমার এ দু’টি উট হ’তে আপনি যে কোন একটি নিন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তবে মূল্যের বিনিময়ে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমরা তাঁদের জন্য যাবতীয় ব্যবস্থা অতি দ্রুত সম্পন্ন করলাম এবং একটি থলের মধ্যে তাঁদের জন্য খাদ্যসামগ্রী গুছিয়ে দিলাম। আমার বোন আসমা বিনতে আবূবকর (রাঃ) তার কোমরবন্ধের কিছু অংশ কেটে সে থলের মুখ বেঁধে দিলেন। এ কারণেই তাঁকে ‘জাতুন নেতাক’ (কোমরবন্ধ ওয়ালী) বলা হ’ত। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আবূবকর (রাঃ) ছাওর পর্বতের একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। তাঁরা সেখানে তিনটি রাত অবস্থান করলেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আবূবকর (রাঃ) তাঁদের পাশেই রাত্রি যাপন করতেন। তিনি ছিলেন একজন তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন তরুণ। তিনি শেষ রাত্রে ওখান হ’তে বেরিয়ে মক্কায় রাত্রি যাপনকারী কুরাইশদের সঙ্গে মিলিত হ’তেন এবং তাঁদের দু’জনের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র করা হ’ত তা মনোযোগ দিয়ে শুনতেন ও স্মরণ রাখতেন। যখন অাঁধার ঘনিয়ে আসত তখন তিনি সংবাদ নিয়ে তাঁদের উভয়ের কাছে যেতেন। আবূবকর (রাঃ)-এর গোলাম আমির ইবনু ফুহাইরাহ তাঁদের কাছেই দুধালো বকরীর পাল চরিয়ে বেড়াত। রাতের কিছু সময় চলে গেলে পরে সে বকরীর পাল নিয়ে তাঁদের নিকটে যেত এবং তাঁরা দু’জন দুধ পান করে আরামে রাত্রিযাপন করতেন। তাঁরা বকরীর দুধ দোহন করে সাথে সাথেই পান করতেন। তারপর শেষ রাত্রে আমির ইবনু ফুহাইরাহ বকরীগুলি হাঁকিয়ে নিয়ে যেত। এ তিন রাতের প্রতি রাতে সে এমনই করল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আবূবকর (রাঃ) বনী আবদ ইবনু আদি গোত্রের এক ব্যক্তিকে মজুরীর বিনিময়ে ‘খিররীত’ (পথ প্রদর্শক) নিযুক্ত করেছিলেন। দক্ষ পথপ্রদর্শককে ‘খিররীত’ বলা হয়। আছ ইবনু ওয়ায়েল আস-সাহমী গোত্রের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। সে ছিল কাফির কুরাইশদের ধর্মাবলম্বী। তাঁরা উভয়ে তাকে বিশ্বস্ত মনে করে তাঁদের উট দু’টি তার হাতে দিয়ে দিলেন এবং তৃতীয় রাত্রের পরে সকালে উট দু’টি ছাওর গুহার নিকট নিয়ে আসার প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন। আর সে যথাসময়ে তা পৌঁছে দিল। আর আমির ইবনু ফুহাইরাহ ও পথপ্রদর্শক তাঁদের উভয়ের সঙ্গে চলল। প্রদর্শক তাঁদের নিয়ে উপকূলের পথ ধরে চলতে লাগল। ইবনু শিহাব বলেন, আব্দুর রহমান ইবনু মালিক মুদলেজী আমাকে বলেছেন, তিনি সুরাক্বাহ ইবনু মালিকের ভ্রাতুষ্পুত্র। তার পিতা তাকে বলেছেন, তিনি সুরাক্বাহ ইবনু জু‘শুমকে বলতে শুনেছেন যে, আমাদের নিকট কুরাইশী কাফিরদের দূত আসল এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আবূবকর (রাঃ) এ দু’জনের যে কোন একজনকে যে হত্যা করবে অথবা বন্দী করতে পারবে তাকে পুরস্কার দেয়ার ঘোষণা দিল। আমি আমার কওম বনী মুদলিজের এক মজলিসে উপবিষ্ট ছিলাম। তখন তাদের নিকট হ’তে এক ব্যক্তি এসে আমাদের নিকটে দাঁড়াল। আমরা বসাই ছিলাম। সে বলল, হে সুরাক্বাহ! আমি এই মাত্র উপকূলের পথে কয়েকজন মানুষকে যেতে দেখলাম। আমার ধারণা, এরা মুহাম্মাদ (ছাঃ) ও তাঁর সহযাত্রীরা হবেন। সুরাক্বাহ বলেন, আমি বুঝতে পারলাম যে এঁরা তাঁরাই হবেন। কিন্তু তাকে বললাম, এঁরা তাঁরা নয়, বরং তুমি অমুক অমুককে দেখছ। এরা এই মাত্র আমাদের সম্মুখ দিয়ে চলে গেল। তারপর আমি কিছুক্ষণ মজলিসে অবস্থান করে চলে এলাম এবং আমার দাসীকে আদেশ করলাম, তুমি আমার ঘোড়াটি বের করে নিয়ে যাও এবং অমুক টিলার আড়ালে ঘোড়াটি ধরে দাঁড়িয়ে থাক। আমি আমার বর্শা হাতে নিলাম এবং বাড়ির পিছন দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। বর্শাটির এক প্রান্ত হাতে ধরে অপর প্রান্ত মাটি হেচড়ানো অবস্থায় আমি টেনে নিয়ে চলছিলাম ঐ অবস্থায় বর্শার মাটি হেচড়ানো অংশ দ্বারা মাটির উপর রেখাপাত করতে করতে আমার ঘোড়ার নিকট গিয়ে পৌঁছলাম এবং ঘোড়ায় আরোহণ করে তাকে খুব দ্রুত ছুটালাম। সে আমাকে নিয়ে ছুটে চলল। আমি প্রায় তাদের নিকট পৌঁছে গেলাম, এমন সময় আমার ঘোড়াটি হোঁচট খেয়ে আমাকে নিয়ে পড়ে গেল। আমিও তার পিঠ হ’তে ছিটকে পড়লাম। তারপর আমি উঠে দাঁড়ালাম এবং তুণের দিকে হাত বাড়ালাম। তা হ’তে তীরগুলি বের করলাম ও তীর নিক্ষেপের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করে নিলাম যে, আমি তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবো কি-না? তখন তীরগুলি দুর্ভাগ্যবশতঃ এমনভাবে বেরিয়ে এল যে, ভাগ্য নির্ধারণের বেলায় এমন হওয়া পসন্দ করি না। আমি আবার ভাগ্য পরীক্ষার ফলাফল অমান্য করে অশ্বারোহণ করে সম্মুখ পানে এগুতে লাগলাম। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এত নিকটবর্তী হয়ে গেলাম যে তাঁর তিলাওয়াতের আওয়ায শুনতে পাচ্ছিলাম। তিনি ফিরে তাকাচ্ছিলেন না। কিন্তু আবূবকর (রাঃ) বারবার তাকিয়ে দেখছিলেন। এমন সময় হঠাৎ আমার ঘোড়ার সামনের পা দু’টি হাঁটু পর্যন্ত মাটিতে গেড়ে গেল এবং আমি তার উপর হ’তে পড়ে গেলাম। তখন ঘোড়াটিকে ধমক দিলাম, সে দাঁড়াতে ইচ্ছা করল, কিন্তু পা দু’টি বের করতে পারছিল না। শেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে উঠল, তখন হঠাৎ তার সামনের পা দু’টি বের করতে পারছিল না। অবশেষে যখন ঘোড়াটি সোজা হয়ে উঠে দাঁড়াল, তখন তার সামনের পা দু’টি যেখানে গেড়ে ছিল সেখান হ’তে ধূঁয়ার মত ধূলি আকাশের দিকে উঠতে লাগল। তখন আমি তীর দিয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করলাম। এবারও যা আমার অপসন্দনীয় তা-ই প্রকাশ পেল। তখন উচ্চৈঃস্বরে তাঁদের নিরাপত্তা চাইলাম। এতে তাঁরা থেমে গেলেন এবং আমি আমার ঘোড়ায় আরোহণ করে এলাম। আমি যখন এমন অবস্থায় বার বার বাধাপ্রাপ্ত ও বিপদে পড়ছিলাম তখনই আমার অন্তরে এ বিশ্বাস দৃঢ় হয়েছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর এ মিশনটি অচিরেই প্রভাব বিস্তার করবে। তখন আমি তাঁকে বললাম, আপনার কওম আপনাকে ধরে দিতে পারলে একশ’ উট পুরস্কার ঘোষণা করেছে। মক্কার কাফিররা তাঁর সম্পর্কে যে ইচ্ছা করেছে তা তাঁকে জানালাম এবং আমি তাঁদের জন্য কিছু খাবার ও অন্যান্য সামগ্রী পেশ করলাম। তাঁরা তা হ’তে কিছুই নিলেন না। আর আমার কাছে এ কথা ছাড়া কিছুই চাইলেন না- ‘আমাদের খবরটি গোপন রেখ’। এরপর আমি আমাকে একটি নিরাপত্তা লিপি লিখে দেয়ার জন্য তাঁকে অনুরোধ করলাম। তখন তিনি আমির ইবনু ফুহাইরাহকে আদেশ দিলেন। তিনি এক টুকরো চামড়ায় তা লিখে দিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) রওয়ানা দিলেন। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, উরওয়াহ ইবনু যুবায়ের (রাঃ) আমাকে বলেছেন, পথিমধ্যে যুবায়েরের সাথে নবী করীম (ছাঃ)-এর সাক্ষাৎ হয়। তিনি মুসলমানদের একটি বণিক কাফেলার সাথে সিরিয়া হ’তে ফিরছিলেন। তখন যুবায়ের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও আবূবকর (রাঃ)-কে সাদা রঙের পোশাক দান করলেন। এদিকে মদীনায় মুসলিমগণ শুনলেন যে, নবী করীম (ছাঃ) মক্কাহ হ’তে মদীনার পথে রওয়ানা হয়েছেন। তাই তাঁরা প্রতিদিন সকালে মদীনার হাররা পর্যন্ত গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। দুপুরে রোদ প্রখর হ’লে তারা ঘরে ফিরে আসতেন। একদিন তারা পূর্বাপেক্ষা বেশী সময় প্রতীক্ষা করার পর নিজ নিজ গৃহে ফিরে গেলেন। এমন সময় এক ইহুদী একটি টিলায় আরোহণ করে এদিক-ওদিক কি যেন দেখছিল। তখন সে নবী করীম (ছাঃ) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদেরকে সাদা পোশাক পরা অবস্থায় মরীচিকাময় মরুভূমির উপর দিয়ে আগমন করতে দেখতে পেল। ইহূদী তখন নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উচ্চৈঃস্বরে চীৎকার করে বলে উঠল, হে আরব সম্প্রদায়! এইতো সে ভাগ্যবান ব্যক্তি, যার জন্য তোমরা অপেক্ষা করছ। মুসলিমগণ তাড়াতাড়ি হাতিয়ার তুলে নিয়ে মদীনার হাররার উপকণ্ঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সঙ্গে মিলিত হ’লেন। তিনি সকলকে নিয়ে ডানদিকে গিয়ে বনু আমর ইবনু আউফ গোত্রে অবতরণ করলেন। এদিনটি ছিল রবীউল আউয়াল মাসের সোমবার। আবূবকর (রাঃ) দাঁড়িয়ে লোকদের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন। আর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নীরব রইলেন। আনছারদের মধ্য হ’তে যাঁরা এ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেননি তাঁরা আবূবকর (রাঃ)-কে সালাম করতে লাগলেন। তারপর যখন রৌদ্রের উত্তাপ নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর পড়তে লাগল এবং আবূবকর (রাঃ) অগ্রসর হয়ে তাঁর চাদর দিয়ে নবী করীম (ছাঃ)-এর উপর ছায়া করে দিলেন, তখন লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে চিনতে পারল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বনু আমর ইবনু আউফ গোত্রে দশদিনের চেয়ে কিছু বেশী সময় কাটালেন এবং সে মসজিদের ভিত্তি স্থাপন করেন, যা তাক্বওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এতে ছালাত আদায় করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর উটনীতে আরোহণ করে রওয়ানা হ’লেন। লোকেরাও তাঁর সঙ্গে চলতে লাগলেন। মদীনার মসজিদে নববীর স্থানে পৌঁছে উটনীটি বসে পড়ল। সে সময় ঐ স্থানে কতিপয় মুসলিম ছালাত আদায় করতেন। এ জায়গাটি ছিল আস‘আদ ইবনু যুরারাহর আশ্রয়ে পালিত সাহল ও সুহায়েল নামক দু’জন ইয়াতীম বালকের খেজুর শুকাবার স্থান। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে নিয়ে উটনীটি যখন এ স্থানে বসে পড়ল, তখন তিনি বললেন, ইনশাআল্লাহ এ স্থানটিই হবে আবাসস্থল। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেই বালক দু’টিকে ডেকে পাঠালেন এবং মসজিদ তৈরীর জন্য তাদের কাছে জায়গাটি মূল্যের বিনিময়ে বিক্রয়ের ব্যাপারে আলোচনা করলেন। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! বরং এটি আমরা আপনার জন্য বিনামূল্যে দিচ্ছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদের নিকট হ’তে বিনামূল্যে গ্রহণে অসম্মতি জানালেন এবং অবশেষে স্থানটি তাদের হ’তে ক্রয় করে নিলেন। তারপর সে স্থানে তিনি মসজিদ তৈরী করলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদ নির্মাণকালে ছাহাবায়ে কেরামের সঙ্গে ইট বহন করছিলেন এবং ইট বহনের সময় তিনি আবৃত্তি করছিলেন, هَذَا الْحِمَالُ لاَ حِمَالَ خَيْبَرْ * هَذَا أَبَرُّ رَبَّنَا وَأَطْهَرْ ‘এ বোঝা খায়বারের বোঝা বহন নয়। হে আমাদের প্রভু! এর বোঝা অত্যন্ত পুণ্যময় ও অতি পবিত্র’। তিনি আরো বলছিলেন, اللَّهُمَّ إِنَّ الأَجْرَ أَجْرُ الآخِرَهْ * فَارْحَمِ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَهْ ‘হে আল্লাহ! পরকালের প্রতিদানই প্রকৃত প্রতিদান। সুতরাং আনছার ও মুহাজিরদের প্রতি অনুগ্রহ করুন’। তিনি এক মুসলিম কবির কবিতা আবৃত্তি করেন, যার নাম আমাকে বলা হয়নি। ইবনু শিহাব (রহঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এছাড়া অপর কোন পূর্ণ কবিতা পাঠ করেছেন বলে, কোন কথা আমার কাছে পৌঁছেনি’ (বুখারী হা/৩৯০৫) । পরিশেষে বলব, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট’ (তালাক্ব ৩) । আল্লাহর উপর নির্ভরতাই রাসূলকে কুরাইশদের শক্ত বাধার বিপক্ষে বিজয়ী করেছিল; হিজরতকালে পিছন থেকে ধেয়ে আসা সশস্ত্র শত্রু সুরাক্বাহ বিন মালেকের হাত থেকে রক্ষা করে নিরাপদে মদীনায় পৌঁছে দিয়েছিল। আমাদেরকেও তেমনি আল্লাহর প্রতি নির্ভরশীল হ’তে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!
Share:

দাজ্জালের আগমন


এ নশ্বর পৃথিবীর যেদিন ধ্বংস হবে, সেদিনের নাম ক্বিয়ামত। ক্বিয়ামত সংঘটিত হওয়ার দিনক্ষণ আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। তবে এর কিছু পূর্বলক্ষণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বর্ণনা করেছেন। তন্মধ্যে দাজ্জালের আগমন অন্যতম। এ বিষয়ে নিম্নোক্ত হাদীছ।- ফাতিমা বিনতে কায়েস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-এর ঘোষককে এ ঘোষণা দিতে শুনলাম যে, ‘ছালাতের জন্য মসজিদে যাও’। সুতরাং আমি মসজিদে গেলাম এবং রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। ছালাত শেষে তিনি মিম্বারে উঠে বসলেন এবং মৃদু হেসে বললেন, প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ ছালাতের স্থানে বসে থাক। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান, আমি তোমাদেরকে কেন একত্রিত করেছি? ছাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)ই অধিক জানেন। তিনি বললেন, আল্লাহ্র কসম! আমি তোমাদেরকে কিছু দেওয়ার জন্য বা কোন ভয়-ভীতি প্রদর্শনের জন্য সমবেত করিনি। বরং তামীম দারীর একটি ঘটনা তোমাদের শুনানোর জন্য তোমাদেরকে একত্রিত করেছি। তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করেছে। সে আমাকে এমন একটি ঘটনা শুনিয়েছে, তা ঐ কথার সাথে মিল রাখে, যা দাজ্জাল সম্পর্কে আমি তোমাদেরকে শুনিয়েছি। সে বলল, একদা সে ‘লাখাম’ ও ‘জুজাম’ গোত্রের ত্রিশজন লোকের সঙ্গে একটি সামুদ্রিক নৌকায় সফরে বের হয়েছিল। সাগরের তরঙ্গ তাদেরকে দীর্ঘ এক মাস পর্যন্ত এদিক সেদিক ঘুরাতে থাকে। অবশেষে একদিন সূর্যাস্তের সময় একটি দ্বীপের কাছে গিয়ে পৌঁছল। অতঃপর তারা উক্ত বড় নৌকার গায়ের সাথে বাঁধা ছোট ছোট নৌকা যোগে দ্বীপটির অভ্যন্তরে প্রবেশ করল এবং সেখানে এমন একটি প্রাণীর সাক্ষাত পেল, যার সারা শরীর বড় বড় লোমে আবৃত। অধিক পশমের কারণে তার মুখ ও পিছন বুঝা যাচ্ছিল না। তখন তারা তাকে লক্ষ্য করে বলল, তোর অমঙ্গল হোক, তুই কে? সে বলল, আমি জাসসাস বা গুপ্ত সংবাদ অন্বেষণকারী। তোমরা ঐ ঘরে আবদ্ধ লোকটির কাছে যাও, সে তোমাদের সংবাদ জানার প্রত্যাশী। তামীম দারী বলেন, উক্ত প্রাণীর কাছে লোকটির কথা শুনে আমাদের অন্তরে ভীতির সঞ্চার হ’ল যে, সে শয়তান হ’তে পারে। তখন আমরা দ্রুত সেখানে গেলাম এবং সে ঘরে প্রবেশ করলাম। সেখানে এমন একটি প্রকান্ড দেহ বিশিষ্ট মানুষ দেখতে পেলাম, যা ইতিপূর্বে কোনদিন দেখিনি। সে খুব শক্তভাবে বাঁধা অবস্থায় ছিল। তার হাত ঘাড়ের সাথে এবং হাঁটুদ্বয় নীচের উভয় গিটের সাথে লোহার শিকল দ্বারা একত্রে বাঁধা ছিল। আমরা তাকে বললাম, তোর অমঙ্গল হোক! তুই কে? সে বলল, নিশ্চয়ই তোমরা আমার সম্পর্কে জানতে পারবে, আমি তা গোপন করব না। তবে তোমরা আমাকে প্রথমে বল তোমরা কারা? তারা বলল, আমরা আরবের লোক। আমরা সমুদ্রে একটি নৌকায় আরোহী ছিলাম। দীর্ঘ এক মাস সাগরের ঢেউ আমাদেরকে এদিক সেদিক ঘুরিয়ে এখানে এনে পৌঁছিয়েছে। তারপর আমরা অত্র দ্বীপে প্রবেশ করলাম। এরপর ঘনপশমে সারা দেহ আবৃত একটি প্রাণীর সাথে আমাদের সাক্ষাত হ’ল। সে বলল, আমি গুপ্ত সংবাদ অন্বেষণকারী। সে আমাদেরকে এ ঘরে আসতে বললে আমরা দ্রুত তোমার নিকট এসে উপস্থিত হ’লাম। সে বলল, আচ্ছা তোমরা আমাকে বল দেখি, বায়সান এলাকার খেজুর গাছে ফল আসে কি? (বায়সান হেজাযের একটি জায়গার নাম)। আমরা বললাম, হ্যাঁ আসে। সে বলল, অদূর ভবিষ্যতে সে গাছে আর ফল ধরবে না। তারপর সে বলল, আচ্ছা বল দেখি, তাবারিয়া নামক বিলে পানি আছে কি? আমরা বললাম, হ্যাঁ তাতে প্রচুর পরিমাণে পানি আছে। সে বলল, অচিরেই তার পানি শেষ হয়ে যাবে। তারপর সে বলল, আচ্ছা বল দেখি, যোগার নামক ঝর্ণায় পানি আছে কি এবং সেখানকার অধিবাসীরা সে ঝরণার পানি দ্বারা কি জমি চাষ করে? আমরা বললাম, হ্যাঁ তাতে প্রচুর পানি আছে এবং সেখানকার লোকেরা পানি দ্বারা জমি চাষাবাদ করে। তারপর সে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা বল দেখি, নিরক্ষর নবীর সংবাদ কি? আমরা বললাম, তিনি এখন মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনায় অবস্থান করছেন। সে জিজ্ঞেস করল, বল দেখি আরবেরা কি তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছিল? আমরা বললাম, হ্যাঁ করেছে। সে জিজ্ঞেস করল, তিনি তাদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন? আমরা বললাম, তিনি আশপাশের আরবদের প্রতি জয়ী হয়েছেন এবং তারা তাঁর আনুগত্য স্বীকার করেছে। এসব শুনে সে বলল, তোমরা জেনে রাখ! তাঁর আনুগত্য করা তাদের জন্য মঙ্গলজনক। আচ্ছা এবার আমি আমার অবস্থা বর্ণনা করছি- আমি দাজ্জাল। অদূর ভবিষ্যতে আমাকে বের হওয়ার অনুমতি প্রদান করা হবে। আমি বের হয়ে যমীনে বিচরণ করব, মক্কা মদীনা ব্যতীত। চল্লিশ দিনের মধ্যে পৃথিবীর সব স্থান বিচরণ করব। এ দু’স্থানে আমার জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যখনই আমি তার কোন একটিতে প্রবেশের ইচ্ছা করব, তখন ফেরেশতা উন্মুক্ত তরবারী হাতে নিয়ে আমাকে প্রবেশ করা হ’তে বাধা প্রদান করবে। বস্ত্তত তার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতা পাহারা রত রয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, এ পর্যন্ত বর্ণনা করে রাসূল আপন লাঠি দ্বারা মিম্বারে ঠোকা দিয়ে তিনবার বললেন, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা। তারপর তিনি বললেন, বল দেখি ইতিপূর্বে আমি কি তোমাদেরকে এ হাদীছটি বর্ণনা করিনি? লোকেরা বলল, জি হ্যাঁ। তারপর তিনি বললেন, দাজ্জাল সিরিয়ার কোন এক সাগরে অথবা ইয়ামনের কোন এক সাগরে আছে। পরে বললেন, বরং সে পূর্ব দিক হ’তে আগমন করবে। এই বলে তিনি হাত দ্বারা পূর্ব দিকে ইশারা করলেন (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৪৮) । উপরোক্ত হাদীছের ন্যায় নিম্নোক্ত হাদীছটিতেও দাজ্জালের পৃথিবীতে অবস্থান, ঈসা (আঃ)-এর পৃথিবীতে আগমন ও অবস্থান সহ ক্বিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণিত হয়েছে।- আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, দাজ্জাল বের হবে এবং চল্লিশ পর্যন্ত অবস্থান করবে। আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন, আমি অবগত নই যে, রাসূল (ছাঃ) চল্লিশ দিন বললেন, না চল্লিশ মাস বললেন, না চল্লিশ বছর বললেন। তারপর আল্লাহ ঈসা ইবনে মারইয়ামকে প্রেরণ করবেন। দেখতে তিনি উরওয়া ইবনে মাস‘ঊদের মত। তিনি দাজ্জালের খোঁজ করবেন এবং তিনি তাকে হত্যা করবেন। ঈসা (আঃ) ৭ বছর এ যমীনে অবস্থান করবেন। সে সময় মানুষের মধ্যে এমন শান্তি বিরাজ করবে যে, দু’জনের মধ্যেও কোন শত্রুতা থাকবে না। তারপর আল্লাহ্ তা‘আলা সিরিয়ার দিক হ’তে শীতল বাতাস প্রবাহিত করবেন। সে বাতাস ভূপৃষ্ঠে এমন একজন লোককেও জীবিত রাখবে না, যার অন্তরে রেণু-কণা পরিমাণ নেকী বা ঈমান থাকবে। অর্থাৎ তোমাদের কেউ যদি পাহাড়ের মধ্যে আত্মগোপন করে তবুও সেখানে এ বাতাস প্রবেশ করবে এবং তাকে মেরে ফেলবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, তারপর কেবল মাত্র নিকৃষ্ট ফাসেক ও বদকার লোকগুলি অবশিষ্ট থাকবে। তারা ব্যভিচারে পাখিদের ন্যায় দ্রুতগামী হবে এবং খুনখারাবীতে হিংস্র প্রাণীর ন্যায় পাষাণ হবে। ভাল-মন্দ তারতম্য করার কোন যোগ্যতা তাদের থাকবে না। তখন শয়তান একটি আকৃতি ধারণ করে তাদের নিকট আসবে এবং বলবে তোমাদের কি লজ্জাবোধ হয় না? তখন লোকেরা বলবে আচ্ছা তুমিই বল, আমাদের কি করা উচিত? তখন শয়তান তাদেরকে মূর্তিপূজার আদেশ দিবে। এ অবস্থায় তারা অতি সুখ স্বাচ্ছন্দ্যে ও ভোগবিলাসে জীবন যাপন করতে থাকবে। অতঃপর সিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং যে ব্যক্তিই উক্ত ফুঁক শুনবে, সে ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় এদিক সেদিক মাথা ঘুরাতে থাকবে। নবী করীম (ছাঃ) বলেন, সর্ব প্রথম উক্ত আওয়ায সে ব্যক্তিই শুনতে পাবে যে তার উটের জন্য পানির চৌবাচ্চা মেরামত কাজে রত। তখন সে ভীত হয়ে সেখানেই মৃত্যুবরণ করবে এবং তার সাথে সাথে অন্যান্য লোকও মারা যাবে। অতঃপর আল্লাহ্ কুয়াশার ন্যায় খুব হালকা ধরনের বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এতে ঐ সমস্ত দেহগুলি সজীব হয়ে উঠবে, যেগুলি কবরের মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর দ্বিতীয়বার সিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে। তখন সমস্ত লোক উঠে দাঁড়াবে। এরপর ঘোষণা দেওয়া হবে, হে লোক সকল! তোমরা দ্রুত তোমাদের প্রতিপালোকের দিকে ছুটে আস। ফেরেশতাদের আদেশ দেওয়া হবে তাদেরকে এখানে থামিয়ে রাখ, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অতঃপর ফেরেশ্তাদের বলা হবে, ঐ সমস্ত লোকদের বের কর, যারা জাহান্নামের উপযোগী হয়েছে। তখন ফেরেশতাগণ বলবেন, কতজন হ’তে কতজন বের করব? বলা হবে, প্রত্যেক হাযার হ’তে নয়শত নিরানববই জনকে জাহান্নামের জন্য বের কর। এ পর্যন্ত বলার পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, এটা সেই দিন যেদিন সম্পর্কে কুরআনে বলা হয়েছে, يَوْمَ يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيْبًا ‘সেদিন শিশুদেরকে বৃদ্ধ করে দেওয়া হবে’ (মুয্যাম্মিল ১৭) । অর্থাৎ সেদিনের বিভীষিকায় শিশুও বৃদ্ধ হয়ে যাবে। সেদিন হবে খুব সংকটময়’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৮৬) । ক্বিয়ামত সংঘটিত হবে, এ সত্যকে মুমিন মাত্রই বিশ্বাস করে। আর তার জন্য যথাসাধ্য প্রস্ত্ততি গ্রহণ করতে হবে এবং তার ভয়াবহতা থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানকে আমলে ছালেহ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন- আমীন!
Share:

আল্লাহর উপরে ভরসার গুরুত্ব


জনৈক দরিদ্র ব্যক্তি মক্কায় বসবাস করত। তার ঘরে সতী-সাধ্বী স্ত্রী ছিল। একদিন স্ত্রী তাকে বলল, হে সম্মানিত স্বামী! আজ আমাদের ঘরে কোন খাবার নেই। আমরা এখন কি করব? একথা শুনে লোকটি বাজারের দিকে কাজ খুঁজতে বেরিয়ে গেল। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সে কোন কাজ পেল না। একসময় ক্লান্ত-শ্রান্ত হয়ে সে মসজিদে গমন করল। সেখানে সে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে স্বীয় কষ্ট দূর হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকটে দো‘আ করল। দো‘আ শেষে মসজিদ চত্তরে এসে একটি ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখল এবং সেটা খুলে এক হাযার দিরহাম পেয়ে গেল। ফলে তা নিয়ে লোকটি আনন্দচিত্তে গৃহে প্রবেশ করল। কিন্তু স্ত্রী উক্ত দিরহাম গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলল, অবশ্যই আপনাকে এ সম্পদ তার মালিককে ফেরৎ দিয়ে আসতে হবে। ফলে সে পুনরায় মসজিদে ফিরে গিয়ে দেখতে পেল যে, এক ব্যক্তি বলছে ‘কে একটি থলি পেয়েছে যেখানে এক হাযার দিরহাম ছিল?’ একথা শুনে সে এগিয়ে গিয়ে বলল, আমি পেয়েছি। এই নিন আপনার থলিটি। আমি এটা এখানে কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। একথা শুনে লোকটি তার দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল, ঠিক আছে ব্যগটি আপনিই নিন। আর সাথে আরো নয় হাযার দিরহাম নিন। একথা শুনে দরিদ্র লোকটি বিস্মিত হয়ে তার দিকে তাকিয়ে রইল। তখন লোকটি বলল, সিরিয়ার জনৈক ব্যক্তি আমাকে দশ হাযার দিরহাম দিয়ে বলেছিল যে, এর মধ্য থেকে এক হাযার দিরহাম আপনি মসজিদে ফেলে রাখবেন এবং কেউ তা তুলে নেওয়ার পর আহবান করতে থাকবেন। তখন যে আপনার আহবানে সাড়া দিবে, আপনি তাকে সম্পূর্ণ টাকা প্রদান করবেন। কেননা সেই হ’ল প্রকৃত সৎ ব্যক্তি।
Share:

পাপী ব্যক্তি ও তার শাস্তি


ইরাকের মুছেলের এক সৎ ব্যক্তি, যার নাম ছিল আলী ইবনু হারব। তিনি বলেন, আমি নিত্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস ক্রয় করার জন্য মুছেল থেকে সুররামান রায়া নামক স্থানে যাচ্ছিলাম। সে সময় দাজলা নদীতে কিছু নৌকা ছিল। যেগুলো ভাড়ায় লোকজন ও মালামাল পারাপার করত। আমি একটি নৌকায় আরোহণ করলাম। নৌকা আমাদেরকে নিয়ে সুররামান রায়ার দিকে চলতে শুরু করল। নৌকায় মালামাল ব্যতীত আমরা পাঁচ জন যাত্রী ছিলাম। আবহাওয়া ছিল চমৎকার। আকাশ খুব পরিচ্ছন্ন ছিল। দাজলা নদীও ছিল শান্ত। নৌকা তরতর করে বয়ে চলছিল। যাত্রীদের অধিকাংশই তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল। আমি দাজলা নদীর উভয় তীরের সৌন্দর্য অবলোকন করছিলাম। হঠাৎ পানি থেকে একটি বড় মাছ লাফিয়ে নৌকায় এসে পড়ল। আমি ছুটে গিয়ে মাছটি ধরে ফেললাম। বিশালকায় মাছের লেজের ঝাপটানিতে লোকদের তন্দ্রা দূর হয়ে গেল। মাছ দেখতে পেয়ে তাদের একজন বলল, এই মাছ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য পাঠিয়েছেন। আমরা সামনে কোন তীরে নেমে মাছটি ভুনা করে খাব। সকলে একমত হওয়ায় তীরের দিকে নৌকা ঘুরিয়ে দেওয়া হ’ল। আমরা তীরে অবতরণ করে ঘন গাছ বিশিষ্ট এক স্থানে অবস্থান করলাম, যাতে জ্বালানী জমা করে মাছটি রান্না করা যায়। আমরা সেখানে এক আশ্চর্য দৃশ্য দেখলাম। একটি মৃতদেহ মাটিতে পড়ে আছে, পাশেই পড়ে আছে একটি ধারালো চাকু। অদূরে অন্য এক যুবক হাত-পা এবং মুখে কাপড় বাঁধা। সে বাঁধন মুক্ত হওয়ার প্রানান্ত চেষ্টা করছে। আমরা দ্রুত সামনে গিয়ে ঐ ব্যক্তির সকল বাঁধন খুলে দিলাম। তার চেহারায় অত্যন্ত ভীতি ও নিরাশার ছাপ ছিল। বাঁধন মুক্ত হয়ে সে বলল, দয়া করে আমাকে একটু পানি দাও। আমরা তাকে পানি দিলাম। এরপর আমাদেরকে সে পূর্ণ ঘটনা শুনাল। সে বলল, আমি ও এ মৃত ব্যক্তি একই কাফেলায় ছিলাম। আমরা মুছেল থেকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে বাগদাদ যাচ্ছিলাম। এ নিহত ব্যক্তি ভাবল যে, আমার নিকট অনেক অর্থ আছে। তাই সে আমার সাথে আন্তরিকতা গড়ে তোলে এবং আমার ঘনিষ্ঠজনে পরিণত হয়। আমারও তার উপর যথেষ্ট ভরসা ছিল। কাফেলা বাগদাদ যাওয়ার পথে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য এ তীরে তাঁবু ফেলল। রাতের শেষ ভাগে কাফেলা রওয়ানা হয়ে গেল। কিন্তু আমি ঘুমিয়ে থাকায় কাফেলা রওয়ানা হওয়ার কথা জানতে পারিনি। আমার ঘুমের মধ্যে নিহত ব্যক্তি আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলে। মুখও কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়, যাতে আমি চিৎকার করতে না পারি। এরপর সে আমাকে হত্যা করার জন্য মাটিতে ফেলে দিয়ে আমার বুকের উপর বসে হত্যা করতে উদ্যত হয়। তখন আমি বললাম, ওহে! তুমি আমার সকল সম্পদ নিয়ে নাও, তবুও আমাকে প্রাণে মের না। সে এতে রাযি হ’ল না; বরং তার বেল্টের সাথে বেঁধে রাখা ধারালো চাকু বের করার চেষ্টা করল। কিন্তু সে সহজে চাকুটি বের করতে পারল না। ফলে সে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে চাকু বের করতে গেল। এতে চাকু তার নিজ গলায় বিদ্ধ হয়ে শাহরগ কেটে গেল। তার প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হ’লে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ল। এ পাপিষ্ঠ আমার চোখের সামনে তার পাপের শাস্তি পেয়ে গেল। আমি মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম। কেননা আমরা যেখানে আছি, কম লোকই এই পথ দিয়ে যায়। ফলে বাঁধনমুক্ত হওয়ার ব্যাপারে আমি হতাশ হয়ে পড়লাম। অবশেষে আমি আল্লাহর নিকট দো‘আ করলাম, হে আল্লাহ! তুমি আমার নিকট কাউকে পাঠিয়ে আমাকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার কর। আমি সর্বদা এ দো‘আই করছিলাম। এ কারণেই হয়ত আল্লাহ তোমাদেরকে পাঠিয়ে আমাকে রক্ষা করেছেন। বলতো, তোমরা কি কারণে এ জনমানবহীন স্থানে আসতে বাধ্য হয়েছ? কাফেলার লোকেরা বলল, একটা মাছ আমাদেরকে তোমার নিকট আসতে বাধ্য করেছে। যেটা পানি থেকে আমাদের নৌকায় লাফিয়ে উঠেছিল। আমরা এই মাছ ভুনা করে খাবার জন্য এখানে এসেছি। কাফেলার লোকদের কথা শুনে ঐ ব্যক্তি আশ্চর্য হয়ে বলতে লাগল, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তা‘আলা ঐ মাছটিকে তোমাদের নৌকায় পাঠিয়েছিলেন আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য। এরই মধ্যে মাছটি নৌকা হ’তে লাফ দিয়ে পানিতে পড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। সবার ধারণা হ’ল যে, আল্লাহ মাছকে ঐ ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্যই পাঠিয়েছিলেন। – আব্দুর রহীম
Share:

Wednesday, March 14, 2018

ফেরাউন ও মুসা


মহাপ্লাবনের পর বহুকাল অতিবাহিত হয়েছে। নূহের বংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বংশে একজন পরম ধার্মিক লোক জন্মগ্রহণ করলেন, তাঁর নাম ইসরাইল। তিনি যে দেশে বাস করতেন তার নাম কেনান। মিশরের বাদশাহ ফেরাউন তাঁকে মিশরে এসে বাস করার আমন্ত্রণ করেন। তিনি ইসরাইলকে যথেষ্ট প্রীতির চক্ষে দেখতেন। ফেরাউন কালক্রমে পরলোক গমন করলে অপর একজন ফেরাউন সিংহাসনে উপবেশন করলেন। ফেরাউন কোন লোকের নাম নয়। মিশরের বাদশাহদিগকে ফেরাউন বলা হতো, ইহা পদবী যাহা হউক, পরের এই ফেরাউন অত্যাচারী ছিলেন। তিনি পূর্ববর্তী ফেরাউনের একজন উজীর ছিলেন। প্রথমে তিনি খুব সৎস্বভাবের লোক ছিলেন। নানা রকমে প্রজাদের উপকার করতেন। কোন বৎসর অজন্মা হলে তিনি নানা রকম কৌশল করে প্রজাদের খাজনা মওকুফ করবার বা শোধ করবার ব্যবস্থা করতেন। যদি রাজ্যে কখনও দুর্ভিক্ষ দেখা দিতো তাহলে তিনি বাদশাহের ধনাগার থেকে কৌশলে অর্থ বের করে গরীব প্রজাদিগকে অনাহারের কবল থেকে রক্ষা করতেন। এইজন্য প্রজারা তাঁকে খুব বেশি সম্মান ও ভক্তি করতো। ফেরাউন গত হলে মিশর দেশের লোকেরা তাঁকেই তাদের বাদশাহ নিযুক্ত করলেন। কিন্তু বাদশাহ হবার পর তার মনের অবস্থা যেন আমূল পরিবর্তিত হয়ে গেলো। তিনি ইসরাইল ও তার বংশধরগণের ওপরে অত্যাচার আরম্ভ করলেন। তিনি অনেক দেশ জয় করে তাঁর রাজ্য আরও বৃদ্ধি করলেন। চারদিক থেকে রাজস্ব ও উপঢৌকন এসে তার ধনাগার পূর্ণ হতে লাগলো। সাধারণ ব্যক্তি সহসা বিত্তশালী হলে তার মনে অহঙ্কার জন্মে এবং তার নানা কু-পরামর্শতাদাও জোটে। সুতরাং ফেরাউনেরও এমন হিতৈষী বন্ধুর অভাব ঘটল না। হামান নামক একজন কূটবুদ্ধি উজীর তাঁকে দুনিয়ার বাদশাহ হবার স্বপ্ন দেখাতে লাগলো। প্রজারা যাতে নীরেট মূর্খ হয়ে থাকে এবং তাকে খোদা বলে মান্য করে তার জন্য নানা যুক্তি-পরামর্শ দিতে লাগলো। মন্ত্রী হামানের পরামর্শ মতো ফেরাউন সমগ্র রাজ্যের মাতব্বর প্রজাদের ডেকে একটা বড় সভা করলেন। সেই সভাতে তিনি তাদের বুঝিয়ে দিলেন যে, লেখাপড়া শিখে মিছামিছি সময় নষ্ট করবার আর প্রয়োজন নেই। কারণ, লোকের পরমায়ু অতি অল্পকাল। এই সঙ্কীর্ণ সময়ের মধ্যে জীবনের বেশির ভাগ দিনই যদি মক্তবে এবং পাঠশালায় গমনাগমন করে এবং পড়ার ভাবনা ভেবে ভেবে কাটিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে আমোদ আহলাদ এবং স্ফুর্তি করবার অবসর পাওয়া যাবে না। সুতরাং সারাজীবন ভরে আমোদ করো –মজা করো। তাহলে মরবার সময়ে মনে বিন্দুমাত্র অনুতাপ আসবে না। প্রজারা ফেরাউনের ও হামানের এই উপদেশ সানন্দে গ্রহণ করলো এবং বংশধরদের কাউকে আর বিদ্যালয়ে প্রেরণ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিলো। অতঃপর হামান পাঠশালা ও মক্তব রাজ্য থেকে উঠিয়ে ঢাক পিটিয়ে দেশময় প্রচার করে দিলো যে, কেউ আর লেখাপড়া শিখতে পারবে না। রাজার আদেশ অমান্য করলে সবংশে তার গর্দান যাবে। প্রজারা ফেরাউনের আদেশ মতো চলতে লাগলো। লেখাপড়া আর কেউ শিখতে চেষ্টা করলো না। সারাদেশে কিছুকালের মধ্যে একেবারে গণ্ডমুর্খতে পূর্ণ হয়ে গেল। মূর্খের অশেষ দোষ। কোন ধর্মাধর্ম, হিতাহিত জ্ঞান তার থাকে না। তারা হয় কাণ্ডজ্ঞানবিবর্জিত এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন। দুনিয়ার এমন কোন অসৎ কাজ নেই যা মূর্খে না করতে পারে! যখন তার রাজ্যের প্রজাদের এই অবস্থা ফেরাউন মনে মনে হাসতে লাগলো। তার উদ্দেশ্য এতদিনে সিদ্ধ হয়েছে। তিনি প্রত্যেককে একটা করে নিজের প্রতিমূর্তি দিয়ে তাকে সৃষ্টিকর্তা এবং উপাস্য বলে পূজা করতে হুকুম দিলেন। নিজের ঘরে বসে যদি খোদার উপাসনা করা যায় তবে কেউ কি মসজিদে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়াতে চায়? ফেরাউনের আদেশে সকলে সন্তুষ্ট হলো। এমন করে অনেক দিন কেটে যাওয়ার পর একদিন তিনি প্রজাদের ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন যে, তারা কাকে খোদা বলে মানে? তারা বললোঃ ফেরাউনের প্রতিমূর্তিকেই খোদা বলে মান্য করে। কিছুদিন যায়। একবার অনাবৃষ্টির জন্য দেশে দারুণ অজন্মা হয়েছিলো। এমন কি নীলনদের পানি পর্যন্ত শুকিয়ে গিয়েছিলো। প্রজারা সুযোগ মতো বাদশাহকে বললোঃ জাঁহাপনা আপনি যদি খোদা হন, তবে আপনি খেঅদার মতো ক্ষমতা আমাদের একবার দেখান।এবার বৃষ্টির অভাবে নীলনদ পর্যন্ত শুকিয়ে গেছে এবং মাঠের সমস্ত ফসল পুড়ে গেছে। আপনি নীলনদ পানিতে পূর্ণ করে আমাদের ফসল রক্ষা করে দেবার ব্যবস্থা করে দিন। এবার ফেরাউন বড় বিপদে পড়লেন! কিন্তু চতুরতার সঙ্গে তাদের আশ্বাস দিয়ে বললেনঃ এর আর এমন বেশি কথা কি! আগে এ সংবাদ আমায় জানাও নি কেন? আজ আমার অনেক কাজ-আজ সময় হবেনা। আগামীকাল তোমাদের নীলনগ পানিতে ভর্তি করে দেবো। তোমরা সেই পানি দিয়ে ফসল রক্ষা করো। প্রজারা খুশী হয়ে বাড়ি চলে গেলো। প্রজারা বিদায় হলে ফেরাউন চিন্তা করতে লাগলেন, কি করা যায়! সারাদিন কেটে গেলো –তারপর সন্ধ্যা হয়ে এলো। গভীর রাত্রে একাকী ঘোড়ায় চড়ে রাজধানী থেকে বেরিয়ে পড়লেন। শহর থেকে ময়দান পার হয়ে গ্রাম, গ্রাম পার হয়ে এক ভীষণ জঙ্গলের মধ্যে প্রবেশ করলেন। সেখানে ছিল এক মস্ত বড় কূপ। সে কূপের ধারে এসে ফেরাউন ঘোড়া থেকে নামলেন। তারপর একগাছি দড়ি আপনার পায়ে বাঁধলেন, সে দড়ি একটা গাছের গোড়ায় শক্ত করে বেঁধে সেই কূপের মধ্যে ঝাঁপ দিয়ে পড়লেন। দোদুল্যমান অবস্থায় তিনি উচ্চঃস্বরে কেঁদে কেঁদে খোদার কাছে প্রার্থনা করতে লাগলেনঃ হে দয়াময় প্রভু, তুমি অনেক পাপীর ইচ্ছা পূরণ করছো। এক্ষণে আমি বিপদগ্রস্ত। আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে মালিক। এবারের মতো তুমি আমার মান বাঁচাও। তা’না হলে আমি রাত্রি প্রভাতে আর কারো কাছে মুখ দেখাতে পারবো না। পরকালে তুমি আমাকে যে শাস্তি হয় দিও। এমন সময় তিনি শুনতে পেলেন, ওপর থেকে যেন বলছেনঃ ফেরাউন তোমার ইচ্ছা পূর্ণ হবে। নীলনদ তোমার আদেশ মতো চলবে। এই দৈববাণী শুনে ফেরাউন আনন্দে অধীর হয়ে কূপ থেকে উঠে রাজধানীর দিকে ঘোড়া ছুটিয়ে দিলেন। রাত্রি প্রভাত হতে না হতেই প্রজারা প্রসাদের সমুখে এসে সমবেত হতে লাগলো। ফেরাউন তাদের সঙ্গে নিয়ে নীলনদের কাছে এসে হাজির হলেনঃ চিৎকার করে বললেনঃ নীলনদ পানিতে পূর্ণ হয়ে থাকো। কথা শেষ হতে না হতে শুষ্খ নদীর তটভূমি জোয়ারের পানিতে ভরে উঠলো। দিগন্ত বিস্তৃত শস্যক্ষেত্র পানিতে পরিপ্লুত হয়ে গেলো। প্রজারা ক্ষুব্ধ হয়ে অভিযোগ করলোঃ জাঁহাপনা জমি জমা ডুবে গিয়ে ফসল নষ্ট হয়ে যাবার মতো হলো। হুজুর আমাদের জমির পানি একটু কমিয়ে দেবার ব্যবস্থা করুন। ফেরাউন তাদের প্রার্থনা মতো নীলনদকে আদেশ করলেন। পানি সরে গেলো প্রজারা খুশী হয়ে তাকে খোদা বলে বিশ্বাস করে নিলো। এরা কপতী শ্রেণীর লোক। কিন্তু বনি ইসরাইল নামে অপর এক শ্রেণীর লোক ছিল, তারা তাকে কোনক্রমেই খোদা বলে স্বীকার করলো না। কিন্তু ফেরাউন নানা অসম্ভব ও আশ্চর্য কাজ করে প্রজাদের মনে দিনে দিনে বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে লাগলেন যে, তিনিই প্রকৃত খোদা। ফেরাউনের এক পোষ্যপুত্র ছিলেন, নাম মুসা। তিনি কখনো তাকেখেঅদা বলে স্বীকার করতেন না। মুসার জন্ম সম্বন্ধে একটা কাহিনী আছে। মিশরে ইসরাইলদের বংশ খুব বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিলো। ইসরাইলগণ ফেরাউনকে অবিশ্বাস এবং উপহাস করতেন এজন্য ফেরাউন এদের মোটেই পছন্দ করতেন না। তিনি নিয়ম করলেন যে, ইসরাইলদের পুত্রসন্তান হলেই তাকে নীলনদের পানিতে ফেলে দিতে হবে। এমনিভাবে কত সন্তান যে বধ করা হলো তার সীমা সংখ্যা নেই। একদিন ফেরাউনের স্ত্রী গোসল করতে এসে হঠাৎ দেখতে পেলেন নীলনদের ধারে নলবনের মধ্যে একটা সিন্ধুক ভেসে এসে আটকে রয়েছে। তিনি বুঝতে পারলেন, ছেলেটি ইসরাইলদের। শিশুটি দেখে তার অতিশয় মমতা হলো। তিনি তাকে পালন করবেন ঠিক করলেন। একজ ধাত্রীও পাওয়া গেলো। তার হাতে ছেলের ভার দেওয়া হলো। ছেলেটির নাম রাখা হলো মুসা। সেই ধাত্রী অপর কেউ নন, তিনি মুসার গর্ভধারিনী। কালক্রমে ছেলেটি বড় হয়ে উঠলে তাকে ফেরাউনের স্ত্রীর নিকটে ফিরিয়ে দেওয়া হলো। মুসা মিশরীদের সঙ্গে রইলেন বটে, কিন্তু সব সময় তাঁর মনে হতো তিনি যেন ইসরাইলী। একদিন মুসা দেখলেন, একজন মিশরীয় একজন ইসরাইলীকে বেদম প্রহার করছে। তিনি মিশরীয় লোকটিকে হত্যা করে বালিতে পুঁতে ফেললেন। ফেরাউনের কাছে খবর গেলো। তিনি মুসাকে হত্যা করার হুকুম দিলেন। মুসা তখন পালিয়ে মিদিয়ান দেশে চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে এক কৃষকের কন্যাকে বিবাহ করলেন। তারপর মাঠে মেষ চড়িয়ে কাল কাটাতে লাগলেন। অনেকদিন চলে যাবার পর একদিন মুসা তার জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতা হারুণকে সঙ্গে নিয়ে ফেরাউনের দরবারে এসে হাজির হলেন। বললেনঃ আপনি যে নিজেকে খোদা বলে প্রচার করছেন, এ অত্যন্ত অন্যায়। সর্বশক্তিমান খোদা ছাড়া আর কেউ মানবের উপাস্য নেই। আমি খোদার প্রেরিত পয়গম্বর। ফেরাউন তাঁকে তাচ্ছিল্য করে হেসে উড়িয়ে দিলেন। বললেন, কেমন করে বুঝবো যে, খোদা তোমাকে পাঠিয়েছেন? তুমি তার কোন প্রমাণ দিতে পারো? মুসা হাতের লাঠি মাটিতে ফেলে দিলেন, সঙ্গে সঙ্গে সেই লাঠি ভয়ানক অজগর সাপে পরিণত হয়ে গেলো। ফোঁস ফোঁস শব্দে সে যখন এগিয়ে যেতে লাগলো তখন তার মুখ হতে আগুনের হল্কা বের হতে লাগলো। সেই আগুনে গাছপালা মানুষ পশু-পাখি পুড়ে ছাই হয়ে যেতে লাগলো। ফেরাউন ছুটে গিয়ে মুসার হাত ধরে মিনতি করে বললেনঃ মুসা, খোদা নাকি তোমাকে লোকের মঙ্গল করবার জন্য পাঠিয়েছেন আর তুমি তাদের ধ্বংস করবার চেষ্টা করছো একে নিবৃত্ত কর। মুসা অজগরের গায়ে হাত দিতেই পুনরায় লাঠিতে পরিণত হলো। তিনি তখন ফেরাউনকে বললেনঃ আশা করি আপনি এখন অহঙ্কার ত্যাগ করে ধর্মপথে আসবেন। ফেরাউন বিবেচনা করে পরের দিন জবাব দেবেন বলে সেদিন মুসাকে যেতে বললেন। মুসা চলে গেলেন। ফেরাউন রঙমহলে ফিরে এসে কেমন করে মুসাকে জব্দ করা যায় সে বিষয়ে উজীর-নাজীরদের সঙ্গে পরামর্শ করতে লাগলেন। উজীর হামান অতিশয় কুচক্রী এবং কুটবুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। তিনি ফেরাউনকে বুঝিয়ে দিলেন, মুসা একজন প্রথম শ্রেণীর যাদুকর এবং অতিশয় ধাপ্পাবাজ ব্যক্তি। তাকে জব্দ করার একমাত্র কৌশল রাজ্যের যত বড়বড় যাদুকর আছে সকলকে তলব করে আনতে হবে। তাদের বিদ্যাবুদ্ধির কাছে হার মেনে মুসা এখান থেকে পালিয়ে গেলেই আমাদের উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। সুতরাং হামানের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ আরম্ভ হলো। রাজ্যের মধ্যে যেখানে যত ছোট-বড় যাদুকর ছিলো তাদের আনবার জন্য লোক পাঠানো হলো। তারা যথাসময়ে রাজধানীতে এসে হাজির হলো। কার কত ক্ষমতা তা দেখবার দিন স্থির হলো। ফেরাউনের আহবানে মুসাও এলেন। একজন যাদুকর মন্ত্র উচ্চারণ করতে লাগলো, অমনি চারিদিক থেকে হাজার হাজার সাপ, বিছা, ভীমরুল সৃষ্টি হয়ে নানা রকম শব্দ করতে করতে মুসার দিকে ছুটে যেতে লাগলো। অপর একজন মন্ত্র উচ্চারণ করতে আরম্ভ করলো, অমনি শত শত সিংহ, ব্যাঘ্র চারিদিক থেকে ভীষণ গর্জন করে মুসার দিকে এগিয়ে গেলো। মুসা বিসমিল্লাহ বলে তার লাঠি মাটিতে রেখে দিতেই অমনি এক ভয়ানক অজগর ভয়ঙ্কর গর্জন করে উঠলো। চক্ষের পলকে সে যাদুকরদের সেই সিংহ, বাঘ, সাপ, বিছা, টপাটপ গিলে ফেললো। তারপর ধরলো যাদুকরদের। তাদেরও গলাধকরণ করে ফেরাউনের দিকে এগিয়ে গেলো। ফেরাউন সেখান থেকে ছুটে রঙমহলে পালিয়ে প্রাসাদের সদর দরজা বন্ধ করে দিলেন। এই ঘটনার পর কিছুদিন কেটে গেলো। হঠাৎ একদিন মুসা ফেরাউনের দরবারে এসে পুনরায় তাকে ধর্মকথা শোনাতে লাগলেন এবং ধর্মপথে চলবার জন্য উপদেশ দিতে লাগলেন। কিন্তু ‘চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী’। আল্লাহতা’লা একদা স্বপ্নে মুসাকে বনি-ইসরাইলদিগকে পাপের ভূমি, অধর্মের রাজত্ব মিশর থেকে তাদের পিতৃভূমি কেনান দেশে ফিরে যাবার জন্য আদেশ দিলেন। সেই হুকুম অনুসারে মুসা ফেরাউনের কাছে ইসরা্লদের কেনান দেশে যাবার অনুমতি চাইলেন। কিন্তু ফেরাউন কিছুতেই এ প্রস্তাবে সম্মত হয়ে তাদের মিশর ত্যাগ করতে দিলেন না, বরং তাদের প্রতি অত্যাচার করতে লাগলেন। ইসরাইলদিগকে ফেরাউনের অত্যাচার থেকে উদ্ধার করাবর কোন উপায় না পেয়ে মুসা খোদার নিকটে প্রার্থনা করতে লাগলেন। খোদা তখন তাকে মিশরীয়দের উপর অত্যাচার করবার হুকুম দিলেন। মূসা ও তার ভ্রাতা হারুন মিশরীয়দের উপর নতুন নতুন উৎপাত আরম্ভ করলেন। মুসা নদীতে লাঠির আঘাত করলেন। দেখতে দেখতে পানি রক্ত হয়ে গেলো। নদীর সমস্ত মাছ মরে গেল, তারপর পচে দুর্গন্ধ বের হতে লাগরো। এতটুকু পানি পান করাবর কিছুমাত্র উপায় রইলো না। ইসরাইলদের মিশর ত্যাগের অনুমতি প্রদানের জন্য মুসা পুনরায় ফেরাউনকে অনুরোধ করলেন। ফেরাউন বললেনঃ নদীর পানি শুধরে দাও, আমি সে বিষয়ে বিবেচনা করবো। মুসা তাঁর অনুরোধ রক্ষা করলেন। কিন্তু মুসাকে কয়েকদিন ঘুরিয়ে ফেরাউন তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন না। মুসা ক্রুব্ধ হয়ে পানির দিকে লাঠি ছুঁড়ে দিলেন। অমনি দলে দলে ব্যাঙ মিশর ভূমি ছেয়ে ফেললো। ফেরাউন মুসাকে ব্যাঙের হাত থেকে রক্সা করবার জন্য অনুরোধ জানালেন, মুসা এবারও রক্ষা করলেন। ব্যাঙের কবল থেকে উদ্ধার পেয়ে ফেরাউন প্রতিশ্রুতি ভুলে গেলেন। মুসাও পুনরায় তাদের প্রতি অত্যাচার আরম্ভ করলেন। উঁকুনের উৎপাত শুরু হলো; তারপর মাছির উৎপাত, পমুর মড়ক-একের পর এক আসতে লাগলো। এমন কি সকলের ভীষণ ফোঁড়া হলো। দেশে শিরাবৃষ্টি হয়ে গেলো। পঙ্গপাল এসে সব ফসল নষ্ট করে দিলো। তারপর একবার তিনদিন-চারদিন এমন অন্ধকার হয়ে থাকলো যে, কোনদিকে কারো নজর করবার উপায় রইলো না। মুসা আবার ফেরাউনকে অনুরোধ করলেন যে, এখনও ইসরাইলিদিগকে মিশর ছেড়ে যেতে অনুমতি দেওয়া হোক। যদি তাদের ছেড়ে যেতে দেওয়া না হয় তাহলে মিশরীয়দের ওপর যে ভীষণ অত্যাচার হবে তার তুলনায় বর্তমানের অত্যাচার অতি নগণ্য। ফেরাউনকে বার বার সতর্ক করে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁর কথায় ফেরাউন একোরে কর্ণপাত করলেন না। ইসরাইলদিগকে উদ্ধার করবার জন্য খোদা অসন্তুষ্ট হয় মিশরীয়দের প্রত্যেক বাড়ির বড় ছেলে ও বড় পশুকে মেরে ফেললেন। এবার ফেরাউনের বড় ভয় হলো। তিনি ইসরাইলদের চলে যাবার হুকুম দিলেন। ইসরাইলরা অনুমতি পেয়ে দল বেঁধে রওনা হলেন, মুসা ও হারুন আগে চললেন। ইসরাইলদের চলে যেতে দেখে হামান প্রভৃতি উজীরগণ ফেরাউনকে কুপরামর্শ দিতে লাগলো, রাস্তাঘাট পরিস্কার, নালা-নর্দমা প্রভৃতি সাফ করা, রাজ্যের অনেক ছোটবড় কাজ যা তাদের দিয়ে জোর-জবরদস্তি করে করিয়ে নেওয়া হচ্ছিলো, তারা যদি চলে যায় তাহলে এসব কাজ কারা করবে? সুতরাং তারা যাতে মিশর ছেড়ে যেতে না পারে তার ব্যবস্থা করবার জন্য ফেরাউনকে অনুরোধ করতে লাগলো। ফেরাউন চিন্তা করে দেখলেন ইসরাইলরা চলে গেলে সত্যই কাজকর্মের যথেষ্ট অসুবিধা হবে। তখন তিনি নিজে ও মিশরীয়রা তাদের ফিরিয়ে আনবার জন্য সৈন্যসামন্ত নিয়ে তাদের পিছনে ধাওয়া করলেন। ইসরাইলা ততক্ষণে লোহিত সাগরের তীরে এসে পৌঁছে গেছেন। এমন সময় তাঁরা পেছনে চেয়ে দেখতে পেলেন, ফেরাউনের অগণিত সৈন্য তাঁদের ধরতে আসছে। পেছনে এই বিপদ-সম্মুখে প্রকাণ্ড সাগর। ইসরাইলগণ কোথায় যাবেন ঠিক করতে পারছেন না, ভয়ে তাঁরা কাঁপতে লাগলেন। এমন সময় আল্লাহতা’লা মুসাকে বৈবাণীতে আদেশ করলেনঃ মুসা, তোমার লাঠি দিয়ে সমুদ্রের ওপর আঘাত করো। মুসা তাই করলেনঃ বিশাল সাগর দুই ভাগে দেয়ালের মতো খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সেই পথে দিয়ে হারুণ আগে চললেন, ইসরাইলরা নিরাপদে পিছু পিছু ওপারে চলে গেলেন। সমস্ত লোক পার হয়ে গেলো মুসা নিজেও। তখনও সাগরের সেই রাস্তা তেমনি রয়ে গেলো। ফেরাউন তাঁহার লোকজন এবং সৈন্যসামন্ত নিয়ে ওপারে এসে থামলেন। তিনি দেখলেন, সাগরের মধ্যে এক আশ্চপর্য রাস্তা। আরও দেখলেন, সেই রাস্তা ধরে মুসা ও তাঁর লোকজনেরা নিরাপদে পার হয়ে গেলেন। যখন তারা সাগরের মাঝামাঝি এসেছে এমন সময় খোদা দৈববাণীতে মুসাকে বললেনঃ তাড়াতাড়ি সাগরের ওপরে তোমার লাঠি দিয়ে আবার আঘাত করো। খোদার হুকুম মতো যেই তিনি সাগরের পানিতে আগাত করলেন, অমনি দুই দিন থেকে পান খাড়া উঁচু দেয়াল ফেরাউন ও তার সৈন্যদের ওপর পড়ে তাদের ভাসিয়ে নিয়ে গেলো। মরবার সময় তারা কাঁদবার অবসরটুকু পর্যন্ত পেলো না। সংগৃহীত কোরাণের গল্প-বন্দে আলী মিয়া
Share:

কৃপণ কারুন


তোমরা হয়তো জানো মাটির নিচে সোনা, রূপা, হীরা, মণি-মাণিক্যের খনি এবং সমুদ্রের নিচে ইয়াকুত, জমরদ, প্রবাল ও মুক্তা অনেক আছে। তোমরা শুনে আশ্চর্য হবে যে, এই সবই আগে একজন মাত্র লোকের সম্পত্তি ছিলো। এত বড়ো ধনী পৃথিবীতে আর একজনও ছিলো না এবং আর কেউ কখনো হবে না। তার সেই ধনসম্পত্তি কিরূপে ছড়িয়ে পড়লো এবং ভূগর্ভে ও সমুদ্রের মধ্যে কেমন করে প্রবেশ করলো সেই আজব কাহিনী আজ তোমাদের কাছে বলবো। হযরত মুসার জ্ঞাতি সম্পকরঈয় এক চাচাতো ভাই –নাম ছিলো তার কারূণ। কারূণের বরাত ছিল খুব ভাল। দুনিয়ার সব জায়গায় তার মালগুদাম ছিলো। সমস্ত নদীতে ও সমুদ্রে ঝাঁকে ঝাঁকে তার নৌকা ও জাহাজ চলাফেরা করতো। পৃথিবীর সকল সওদাগরের সে ছিলো একমাত্র মহাজন, সুতরাং সমস্ত কাজ কারবারের মূল। নিজেও কারবার করে সে অনেক অর্থ উপার্জন করতা এবং সওদাগরীর মুনাফা থেকে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মুদ্রা তার আয় হতো। হযরত মুসা তাকে খুব ভালবাসতেন। তাকে আদর করে মাটি দিয়ে সোনা তৈরি করবার কায়দা শিখিয়ে দিয়েছিলেন। এসব নানা ব্যাপারে চারিদিক থেকে কত টাকা যে তার আয় হতো তার লেখাজোখা ছিলো না। এই সব টাকার বদলে সে হীরা, মণি, মু্কতা, জহরৎ, চুনি, পান্না, ইয়াকুত, জমরদ যোগাড় করে লক্ষ লক্ষ সিন্দুক বোঝাই করে রাখতো। সেই সমস্ত সিন্দুকের চাবি একটা মজবুত সিন্দুকে রেখ সেই সিন্দুকের চাবি দড়িতে বেঁধে নিজের কোমরে সর্বদা ঝুলিয়ে রাখতো। সারাদিন রাতের মধ্যে তাকে বড় একটা কেউ বাইরে দেখতে পেতো না। চাবি হাতে করে সে প্রত্যেক দিন গুদামে গুদামে ঘুরে বেড়াতো। তোমরা হয়তো ভেবেছো, এত যার টাকাকড়ি, ধন-দৌলত সে নিশ্চয় খুব বিলাসী এবং ব্যয়ে মুক্ত হস্ত ছিলো। কিন্তু বিলাস বা সখ তার বিন্দুমাত্র ছিলো না। একটা চিন্ন ময়লা তালিযুক্ত পায়জামা এবং গায়ে একটা জামা ও পায়ে একজোড়া চটি জুতা ছিলো তার বেশ। ছেঁড়া চাটাই পেতে মাটিতে শুয়ে সে রাত্রি কাটাতো। দুই একখানি শুকনো রুটি, কিছু খেজুর ও কয়েক পাত্র পানি ছিলো তারা সারাদিনের আহার্য। কথিত আছে, কিছুদিন পরে তাও নাকি সে গ্রহণ করতো না। একখানি মাত্র রুটি এক পাত্র পানিতে ডুবিয়ে সেই পানি পান করে জীবন ধারণ করতো, তারপর সেই রুটিটি শুকিয়ে রাখতো। আত্মীয়-বন্ধু তাকে বলতোঃ তোমার এত ধন-দৌলত তুমি মিছামিছি এত কষ্ট করো কেন? তুমি একজোড়া জুতা কিংবা একটা জামাও কিনতে পারো না? কারূণ হেসে বলতোঃ বাঃ তোমা তো আমাকে বেশ পরামর্শ দিচ্ছো! ক’টা পয়সা বা আমি সিন্দুকে বাক্সে তুলেছি যে তোমরা আমাকে ধনী বলে ঠাট্টা করছো। এখন আমিরীকরে এ ক’টি পয়সা যদি খরচ করে ফেলি তবে বুড়ো বয়সে ছেলেপুলে নিয়ে উপোস করলে দেবে কে বলো? তোমরা আমাকে পথে বসবার বেশ ফন্দি করছো দেখছি। উপদেশ দাতারা এই কথা শুনে অবাক হয়ে চলে যেতো। মুসা একদিন বললেনঃ কারূণ খোদা তোমাকে এত ধন-দৌলত দিয়েছেন, তার একটা সামান্য অংশ গরীব দুঃখীদের মধ্যে জাকাত (দান) দেওয়া তোমার উচিত। ধর্মে নিয়ম আছে যে, শতকরা আড়াই টাকা জাকাত দিতে হয়। আশা করি তুমি শতকরা একটি টাকা জাকাত দেবে। কারূণে তার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে খানিকক্ষণ চেয়ে বললোঃ জাকাত কাকে বলে? মুসা বললেনঃ শতকরা এক টাকা গরীব-দুঃখীদের দান করাকে জাকাত বলে। অন্য কেউ যদি কারুণকে দান করার কথা বলতো তাহলে সে কি করতো বলা যায় না, কিন্তু মুসা সম্পর্কে তার বড় ভাই, কখনো তাঁর কথা সে অমান্য করেনি, সুতরাং মাথা নিচু করে খানিকক্ষণ চুপকরে থেকে জবাব দিলোঃ দেখতেই পাচ্ছো আমি অতি গরীব, টাকা-পয়সা কোথায় পাবো যে জাকাত দেবো? মুসা বললেনঃ কারূণ এত যার ধন-দৌলত সে যদি গরীব হয় তবে ধনী লোক কাকে বলে? কারূন প্রত্যুত্তর করলোঃ খেয়ে না খেয়ে, কত কষ্ট করে ক’টি পয়সাই বা জমেছে, তা’ যদি এখন দান-খয়রাত করে বসি বুড়ো বয়সে খাবো কি? ভিক্ষা করা ছাড়া তো আমারকোন উপায় থাকবে না ভাই। আমাকে মাফ করো, জাকাত আমি দিতে পারবো না। মুসা বিরক্ত হয়ে বললেনঃ খোদা তোমাকে এত দিয়েছেন যে, তুমি যদি সারাজীবন দান করো তা’হলেও শেষ হবে না। কথা শুনে কারূণ হো-হো করে হেসে উঠলো। বললোঃ না বুঝে দান করলে রাজার রাজত্ব উড়ে যায়, আর আমার তো সামান্য ঐ ক’টা পয়সা ও আর উড়তে কতক্ষণ। মুসা বললেনঃ তুমি গরীব কি ধনী সে তর্ক তোমর সঙ্গে করতে আসি নাই। জাকাত দেওয়া তোমার পক্ষে একান্ত কর্তব্য, তাই তোমায় বলতে এসেছি। তুমি জাকাত দেবে কি না বলো? নিরুপায় হয়ে কারূন আমতা আমতা করে বললোঃ আচ্ছা আজ ভেবে দেখি কাল জবাব দেবো। কারূনের মনে আনন্দের লেশ মাত্র নেই। সমস্ত দিন তার একরূপে অনাহারে ও দুশ্চিন্তায় কাটলো। কি করা যায়, মুসাকে কি জবাব সে দেবে, ভেবে-চিন্তে কিছুই সে ঠিক করতে পারলো না। দিন গত হয়ে সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এলো। একটা প্রদীপ জ্বেলে কারূণ হিসাব করতে বললো। একশত টাকায় এক টাকা, হাজার টাকায় দশ টাকা, এক লক্ষ টাকায় হবে এক হাজার! কারূণ আর হিসাব করতে পারলো না, তার মাথা ভোঁ ভোঁ করে ঘুরতে লাগলো। খানিক পরে আবার হিসাব করতে লাগলো, এক লক্ষ টাকায় দি এক হাজার টাকা হয় তাহলে এক কোটি টাকায় হবে এক লক্ষ টাকা। কারূণ পাগলের মতো চিৎকার করে উঠলোঃ মুসা, তোমার উপদেশ শোনার পরিবর্তে আমার বুকে ছুরি মেরে আমাকে মেরে ফেলো। এক কোটি টাকায় এক লক্ষ টাকা আমায় দিতে হবে জাকাত! কেন? গরীব-দুঃখীরা তো টাকা রোজগার করে আমার কাছে জমা রাখেনি যে, আমাকে তাদের দান করতে হবে? আমি দেবো না, এক পয়সাও আমি দেবো না। কারূণ বালিশে মুখ গুঁজে চুপ করে পড়ে রইলো এবং মনে মনে মুসার মুণ্ডপাত করতে লাগলো। সে রাত্রে কারূণ আর ঘুমুতে পারলো না। হঠাৎ প্রদীপটার দিকে তার নজর পড়তেই চমকে উঠলোঃ আঃ তেল সবটা পুড়ে গেলো দেখছি অথচ এক পয়সাও আয় হলো না। বলে প্রদীপটা নিভিয়ে দিয়ে অন্ধকারে দেওয়ালে ঠেস দিয়ে সারারাত বসে বসে আকাশ-পাতাল ভাবতে লাগলো। পরদনি সকাল হতে না হতেই মুসা কারূণের বাড়িতে এসে হাজির। জিজ্ঞাসা করলেনঃ কিছু ঠিক করতে পেরেছো কি কারূণ? কারূণ যেন আকাশ থেকে পড়লো। বিস্ময়পূর্ণ কণ্ঠে বললোঃ কি ঠিক করার কথা বলছো, সেই জাকাতের কথা? এ যাঃ একেবারেই ভুলে গেছি। আচ্ছা আজ তুমি যাও। কাল ঠিক তোমার কথার জবাব দেবো। মুসা চলে গেলেন। কিন্তু পরদিনও এমনি ব্যাপার। এমনি করে রোজ রোজ মিথ্যা ওজর দেখিয়ে কারূণ দিন কাটাতে লাগলো। একদিন মুসা বিরক্ত হয়ে বললেনঃ তোমার কি একটুখানি লজ্জা সরমও নেই কারূণ –রোজই টালবাহানা করো। আমি এখনই শুনতে চাই জাকাত দেবে কি না। কারূনও খুব রাগের সঙ্গে জবাব দিলোঃ তুমি কি মনে করো তোমার কতা আমি বুঝতে পারি না। খেয়ে না খেয়ে, কত কষ্ট করে কিছু সঞ্চয় করেছি তা দেখে তোমাদের চোখ জ্বালা করছে। ফন্দি আটছো, কেমন করে সেগুলো বার করে তোমরা লুটপাট করে নেবে। অত বোকা আমি নই। সেটি কখনও হবে না। আমি এক পয়সাও দান-খয়রাত করবো না। তুমি যা খুশী করতে পারো। মুসা অবাক! কিন্তু হতাশ হলেন না। আরও অনেক দিন ধরে তিনি কারূণকে উপদেশ দিলেন। তিনি আল্লাহতা’লার গজবেরভয় পর্যন্ত দেখালেন, দোজখের দুঃখ, বেহেশতের সুখের কথা বললেন। কিন্তু কারূণ অটল-কিছুতেই তার মত গললো না। এবার মুসা নিরুপায় হয়ে পড়লেন। তিনি খোদার দরগায় এই প্রার্থনা করলেনঃ হে প্রভু, কারূণকে সৎকার্যে দান করবার জন্য আমি যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম কিন্তু তার সদবুদ্ধি হলো না। এখন তোমার আদেশ আমাকে জানাও! জিবরাইল খোদার আদেশ নিয়ে তাঁর কাছে হাজির হলেন। মুসাকে বললেনঃ মুসা, তুমি বনি-ইসরাইলদের মিশর থেকে চলে যেতে বলো। মুসা সে আদেশ পালন করলেন। জিবরাইল জানালেনঃ এখন থেকে বসুমতী তোমার আজ্ঞাধীন হলে। তার দ্বারা তোমার ইচ্ছা অনুযায়ী কার্য করতে পারো। কয়েকদিন পরে মুসা পুনরায় কারূণের নিকট এসে তাকে বললেনঃ কারূণ, তুমি সৎকার্যে দান করো, খোদার পথে জাকাত দাও, নতুবা তোমার মহা অন্যায় হবে। কারূণ জবাব দিলোঃ ভাই মুসা, তোমার এ-কথা অনেকদিন থেকে শুনে আসছি। কোন নতুন খবর থাকে বলতে পারো –বলে সে চলে যেতে উদ্যত হলো। মুসা তাকে ধমন দিয়ে বললেনঃ এখনও হুঁশিয়ার। কারূণ বললোঃ হুঁশিয়ার আগে থেকেই হয়ে আছি। এই কথা শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে তার কোমর পর্যন্ত মাটির মধ্যে প্রবেশ করলো। বিস্ময় ও ভয়ে তার মুখ শুকিয়ে গেলো। বললোঃ বাঃ বেশ তো ভেলকী শিখেছো! চালাকি করে টাকা আদায় করবে এমন কচি খোকা পাও নি। এবারে তার গলা পর্যন্ত মাটির মধ্যে ডুবে গেলো। তখন সে চিৎকার করে মুসাকে বললোঃ তুমি কি এমন করে আমাকে মেরে ফেলতে চাও নাকি? মুসা ধমক দিয়ে বললোঃ খবরদার, এখনও যদি খোদার নামে সৎকাজে দান করো তাহলে পরিত্রাণ পেতে পারো। কারূণ বললোঃ আমার যথাসর্বস্ব দান করে ভিক্ষে করে খাবার জন্য বেঁচে থাকতে আমি চাইনে। সে আরো কানিকটা মাটির মধ্যে ঢুকে গেলো। তার দাড়ির হাডু ঠক করে মাটিতে এসে ঠেকলো। হাতের খানিকটা তখন অবধি বাইরে ছিলো। এইবার কারূণ হেসে ফেললো। মুসা দৃঢ়কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি হাসছো কেন? কারূণ জবাব দিলোঃ যে আশায় তুমি আমাকে মারবার চেষ্টা করছো সে আশা তোমার পূর্ণ হবে না। কারণ সমস্ত সিন্দুকের চাবি যে সিন্দুকে বন্ধ করা আছে –এই দেখ সেই চাবি আমার মুঠোর মধ্যে রয়েছে। দুনিয়াতে এমন কোন হাতিয়ার নেই যা দিয়ে সেই সিন্দুক কাটতে বা ভাঙতে পারবে, কাজেই আমাকে মেরে কোন লাভ নেই। মুসা বললেনঃ মূর্খ, গরীব দুঃখীকে দান করো, খোদার পথে জাকাত দাও –তোমার জীবন রক্ষা হবে। কারূণ কিছু জবাব দিলো না –শুধু সিন্দুকটার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইলো। মুসা বললেনঃ কারূণ তোমার কি বাঁচার ইচ্ছা হয় না? কারূণ মুসার দিকে চোখ না ফিরিয়েই চিৎকার করে বললোঃ না একেবারে না। মুসা প্রশ্ন করলেনঃ বাঁচতে ইচ্ছা হয় না কেন? কারূন জবাব দিলোঃ কেন জানতে চাও? আর কিছুদিন বেঁচে থাকলে তোমরা আমায় ‘ধনী’ ধনী বলে পাগল করে দিতে, আর হয়তো দান-খয়রাত করিয়ে সমস্ত বিষয় আশয় লুটিয়ে দিয়ে আমাকে পথে বসাতে। সুতরাং টাকা কয়টা থাকতে থাকতেই আমার মরা উচিত। মুসা আবার বললেনঃ কারূণ তোমার কি একেবারে বাঁচতে ইচ্ছা হয় না? এবারে কারূণ রেগে চোখ লাল করে বললোঃ টাকার বদলে আমারা বাঁচতে ইচ্ছে হয় না। তারপর আস্তে আস্তে তার নাক, মুখ মাটির মধ্যে প্রবেশ করতে লাগলো। দেখতে দেখতে কারূণের দালান-কোঠা, ধন-দৌলত, সিন্দুক-বাক্স সমস্তই মাটির মধ্যে চলে গেলো। সংগৃহীত কোরাণের গল্প-বন্দে আলী মিয়া
Share:

পাপাচারী যমযম


অনেকদিন আগের কথা। একদিন হযরত ঈসা সিরিয়ার পথে যেতে যেতে একটা মানুষের মাথার খুলি পড়ে রয়েছে দেখতে পেলেন। সেই খুলিটার সঙ্গে কথা বলবার জন্য তাঁর খেয়াল হলো। তিনি তখনই খোদার দরগায় আরজ করলেনঃ হে প্রভু আমাকে এই খুলির সঙ্গে কতা বলবার শক্তি দাও। খোদা তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করলেন। হযরত ঈসা খুলিকে বললেনঃ হে অপরিচিত কঙ্কাল, তোমাকে যে কথা জিজ্ঞাসা করবো, তার ঠিক ঠিক উত্তর দাও। বলবার সঙ্গে সঙ্গে ঈসা শুনতে পেলেন, পরিস্কার ভাষায় সেই খুলিটা ‘কলেমা শাহাদাত’ পাঠ করলো। ঈসা জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি পুরুষ না স্ত্রী? খুলি উত্তর করলোঃ পুরুষ। ঈসা বললেনঃ তোমার নাম কি? খুলি উত্তর করলোঃ জমজম। ঈসা আবার জিজ্ঞাসা করলেনঃ তুমি আগে কি ছিলে? খুলি উত্তর করলোঃ আমি আগে বাদশাহ ছিলাম! ঈসা বললেনঃ বটে। তোমার জীবনে কি কি কাজ করেছিলে? খুলি উত্তর করলোঃ আমি আগে একজন বাদশাহ ছিলাম। ধন-দৌলত, লোক-লস্কর আমার এত বেশি ছিলো যে, দুনিয়ার বাদশাহরা তা দেখে অবাক হয়ে যেতো। তারা আমাকে খুব ভয় আর সম্মান করতো। আমি কিন্তু কারো ওপর কোন অত্যাচার করতাম না। গরীব-দুঃখীদের সাধ্যমতো দান করতান। সমস্ত দিন নিজের কাজে ব্যস্ত থাকতাম। কিন্তু ভুলেও কখনো খোদার নাম মুখে আনতাম না। এমনি করে অনেকদিন আমি বাদশাহী করেছিলাম। একদিন দরবারে বসে কাজ করছি, এমন সময় হঠাৎ আমার মাথা ব্যথা হলো। যন্ত্রণা ক্রমে বাড়তে লাগলো। কিন্তু যন্ত্রণা ক্রমে অহস্য হয়ে উঠলো। যেখানে যত বড় হেকিম ছিলো, চিকিৎসার জন্য তাদের সকলকে ডাকা হলো। কিন্তু কিচুতেই কিছু হলো না। যন্ত্রণায় ছটফট করতে লাগলাম। মাঝে মাঝে অজ্ঞান হয়ে পড়তে আরম্ভ করলাম। এমন সময় হঠাৎ একটা আওয়াজ আমার কাণে ঢুকলো। কেহ যেন চিৎকার করে বলছেঃ জমজমের প্রাণ বের করে দোজখে ফেলে দাও। সেই সঙ্গে সঙ্গে এক বিকট মূর্তি আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। উঃ, কি ভীষণ তার চেহারা! দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে পড়লাম। তারপর কি হলো আমার মনে নেই। যখন আমার জ্ঞান ফিরে এলো তখন দেখলাম প্রাণ নিয়ে যাবার জন্য আজরাইল একা আসেনি –তার সঙ্গে আরো অনেক ফেরেশতা এসেছে। তাদের কারো হাতে লোহার ডাণ্ডা, কারো হাতে শিক, কারো হাতে তলোয়ার। সমস্তই আগুনের পোড়ান জবাফুলের মতো রাঙ্গা। তারা সেই সমস্ত দিয়ে আমাকে সেঁকা ও খোঁচা দিতে লাগলো। আমি যন্ত্রনায় চিৎকার করে বলতে লাগলামঃ ওগো তোমরা খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আমায় মেরো না। আমায় ছেড়ে দাও। আমার ভাণ্ডারে যত ধন-দৌলত হীরা-জহরৎ আছে সব তোমাদের দেবো। এই কথা শুনে তাদের মধ্যে একজন লোহার মতো শক্ত হাতে আমার গালে একটা চাপর দিয়ে বললোঃ রে নাদান! খোদা কারো ধন-দৌলতের পরোয়া করে না। যন্ত্রনায় অস্থির হয়ে কাতরভাবে তাদের মিনতি করে বললামঃ ওগো তোমরা আমায় ছেড়ে দাও। তার বদলে আমার বংশের প্রত্যেক আমি খোদার নামে কোরবানী করবো। এই বলে তাদের দয়ার ভিখিরী হয়ে কাতর নয়নে তাদেরদিকে চেয়ে রইলাম। তারা দাঁত কড়মড় করে ধমকে দিয়ে বললোঃ রে বেয়াদব! খোদা কি ঘোষখোর? আজরাইল তখন ফেরশতাদের বললেনঃ আর দেরী করো না, এখনই এর প্রাণ বের করে দোজখে ফেলে দাও। তারপর তারা আমার প্রাণ বের করে নিয়ে গেলো। তারপর কি হলো আর জানবার ক্ষমতা রইলো না। হঠাৎ মনে হলো যেন আমার জ্ঞান ফিরে এসেছে। চোখ খুললাম। আমি কোথায় আছি প্রথমে বুঝতেই পারলাম না। অন্ধকার, চারিদিকে ঘন অন্ধকার –আলো নেই, বাতাস নেই। এই অবস্থা আমার অসহ্য হয়ে উঠলো, ক্রমে বুঝতে পারলাম যে আমাকে কবর দেওয়া হয়েছে আর সেই কবরের মধ্যে যেন হাজার ফেরেশতা এক সঙ্গে চিৎকার করে বলছেঃ রে নাদান! আমরা তোর প্রাণ বের করে নিয়ে গিয়েছিলাম পুনরায় তোর দেহের মধ্যে প্রাণ দিয়েছি। এখন এই কাফনের কাপড়ের উপর লেখ, দুনিয়ায় তুই কি কি কাজ করেছিস। জীবনের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত যা যা করেছি সব আমার মনে স্পষ্ট জাগতে লাগলো। আমি এক এক করে অল্প সময়ের মধ্যে লিখে ফেললাম। তারপর ফেরেশতারা ভয়ানক গর্জন করে আমাকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ বল তোর খোদা কে? আমি ভয়ে ভয়ে উত্তর করলামঃ তোমরাই আমার খোদা। আমি অন্য খোদা জানি না। তোমরা আমাকে রক্ষা করো। এই কথা শুনে তারা ভয়ানক রেগে গেলো। লোহর ডাণ্ডা দিয়ে আমাকে বেদম প্রহার আরম্ভ করলো। তারপর মনে হতে লাগলো, কবরের মাটি চারিদিক থেকে যেন আমাকে পিষে ফেলবার চেষ্টা করছে। ক্রমে দম বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো। মাটি চিৎকার করে বলতে লাগলোঃ রে বেঈমান! শত শত বৎসর আমার পিঠের উপরে বাদশাহী করে কত অত্যাচার করেছিস আর খোদার না-ফরমানী করেছিস তাই তোর এই শাস্তি। এই কথা বলে মাটি আমার হাড়গুলোকে গুঁড়ো করে ফেলবার চেষ্টা করতে লাগলো। অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করেছি এমন সময়ে কতকগুলি ভীষণ-মূর্তিজীব আমাকে ধরে ওপরে নিয়ে গেলো। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। ভাবলাম, খোদা মেহেরবানি করে আমাকে মাফ করবেন। কিন্তু সে ভরসা শূন্যে মিলিয়ে গেলো যখন দেখলাম তারা আমাকে ধরে নিয়ে গেলো আর একজন লম্বা সাদা দাড়িওয়ালা বিকট চেহারার লোকের কাছে। সে লোকটা ভীষণ চিৎকার করেবলে উঠলোঃ এই কমবখতকে (হতভাগ্যকে) আগুনের শিকল দিয়ে বেঁধে ফেলো, তারপর পায়ের দিক থেকে উল্টো করে ছিড়ে ফেলো। তারা কখনই প্রভুর হুকুম তামিল করতে আরম্ভ করলো। এরপর তারা আমাকে পচা দুর্গন্ধময় একটি কূপের মধ্যে ফেলে দিলো। ক্ষুধায়, পিপাসায় আর অসহ্য যন্ত্রণায় হৃদপিণ্ড যেন বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো। আমি কাতরভাবে তাদের বললামঃ দোহাই তোমাদের, আমাকে এক পাত্র পানি দাও। ফেরেশতারা কিসের রস এনে আমাকে খেতে দিলো। চোখ বুঁজে সেই রস মুখের মধ্যে ঢেলে দিলাম। উঃ কি বিশ্রী দুর্গন্ধ? মনে হতে লাগলো এ জিনিস না খাওয়াই আমার পক্ষে ভাল ছিলো! চিৎকার করে বলতে লাগলামঃ কে আছ, আমায় এক পাত্র পানি দাও, পিপাসায় আমার প্রাণ যায়। সেই কাতরোক্তি শুনে অপর একজন ফেরেশতা এক গ্লাস পানি নিয়ে এলো। মনে ভরসা হলো, এইবার বুঝি বেঁচে গেলাম। চোখ বুঁজে এক নিঃশ্বাস সবটুকু পান করলাম। উঃ এ যে আরো কটু ও দুর্গন্ধ! সমস্ত অন্তরটা জ্বলে যেতে লাগলো। নাক, মুখ, চোখ, কান এমন কি লোমের গোড়া দিয়ে পর্যন্ত দুর্গন্ধ বের হতে লাগলো। আমি চিৎকার করতে লাগলামঃ তোমরা এমন তিল তিন করে যাতনা দিয়ে আমাকে না মেরে যা করবার একেবারেই করে ফেলো। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তারা কেউ আমার কথা গ্রাহ্য তো করলোই না বরং আমার সেই অবস্থা দেখে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করতে লাগলো। আমি যতই যন্ত্রণায় চিৎকার করতে লাগলাম, ততই তারা হো-হো করে হাসতে লাগলো। কিছুক্ষণ পরে একজন ভীষণদর্শন ব্যক্তি আমার সম্মুখে এসে দাঁড়ালো। তার ভয়াবহ আকৃতি দেখে আমার বুক শুকিয়ে গেলো। সে তার বিষ-মাখানো লম্বা নখে আমাকে গেঁথে শূন্যে সোকরাৎ নামক এক পাহাড়ে নিয়ে গেলো। সেই পাহাড়ে সাতটা কূপ। প্রত্যেক কূপ থেকে বিষাক্ত গরম ধোঁয়া বের হচ্ছে। প্রত্যেক কূপে হাজার হাজার বিষাক্ত সাপ ও বিছা পরস্পর কামড়া-কামড়ি করছে আর তাদের মুখের বিষ-নিঃশ্বাসের এই ধুম নির্গত হচ্ছে। ফেরেশতারা আমার চুল ধরে সেই কূপের মধ্যে ফেলে দিলো। সাপ-বিছারা চারিদিক থেকে আমাকে কামড়াতে আরম্ভ করে দিলো। জ্বালায় চিৎকার করতে লাগলাম। তারপর তারা আমাকে এক পুকুরের কাছে নিয়ে গেলো। সে পুকুরে পানি নেই, শুধু পুঁজ, রক্ত ও বিষে ভলা সেই পুকুর। আমার চুল ধরে সেই পুকুরের মধ্যে জোর করে তারা ডুবিয়ে রাখলো। যতই ওপরে উঠার চেষ্টা করি, ততই তারা জোর করে আমাকে চেপে ধরে রাখতে লাগলো। এই রকম করে এক কূপ থেকে আর এক কূপে এবং এক পুকুর থেকেআর এক পুকুরে হাজার বার ডুবিয়ে হাজার বার তুলে একশত বছর ধরে আমাকে কষ্ট দিলো। তারপর আজ হঠাৎ শুনতে পেলাম কে যেন কাকে বলছে, যে পথে হযরত ঈসা যাচ্ছেন সেই পথে জমজমকে দোজখ থেকে তুলে ফেলে দাও। দুনিয়াতে সে অনেক ভাল কাজও করেছিলো। অন্নহীনকে অন্ন এবং বস্ত্রহীনকে বস্ত্রদান করেছিলো! সে আজ তার পুরস্কার পাবে। সে খোদার নাম একবারও মুখে আনেনি বলে যে পাপ করেছিলো তার শাস্তি পুরোমাত্রায় ভোগ করবার পর আবার দুনিয়াতে যাবে। ঈসা জিজ্ঞাসা করলেনঃ জমজম তুমি আমার কাছে কি চাও? জমজম বললোঃ তুমি খোদার কাছে এই প্রার্থনা করো, তিনি যেন আমার সমস্ত পাপ ক্ষমা করে আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেন। ঈসা দুই হাত তুলে জমজমের জন্য খোদার কাছে আরজ করলেন। তারপর বললেনঃ জমজমের হাড় মাংস সমস্ত একত্র হয়ে পুনর্জীবন লাভ করুক। বলতে না বলতে একটি সুদর্শন যুবক মাটি থেকে দাঁড়িয়ে হযরত ঈসাকে সালাম করলো। সংগৃহীত কোরাণের গল্প-বন্দে আলী মিয়া
Share:

সাদ্দাতের বেহেশত


অনেক আগের কথা। আরব দেশে সাদ নামে একটি বংশ ছিলো। এই বংশের লোকদের চেহারা ছিলো যেমন খুব লম্বা এবং চওড়া, গায়েও তেমনি ভীষণ শক্তি। তারাই ছিলো তখন আরব দেশে প্রবল এবং প্রধান। তাদের একজন বাদশাহ ছিলো –তার নাম শাদ্দাদ। শাদ্দাদ ছিলো সাত মুলুকের বাদশাহ। তার ধন-দৌলতর সীমা ছিলো না। হাজার হাজার সিন্দুকে ভরা মণি, মুক্তা, হীরা জহরৎ। পিলপানায় লক্ষ লক্ষ হাতী, আস্তাবলে অসংখ্য ঘোড়া। সিপাই-শাস্ত্রী যে কত তার লেখাজোকা ছিলো না। উজীর-নাজীর, পাত্র-মিত্র, আমলা-গোমস্তায় তার রঙমহল দিনরাত গম-গম করতো। সাধারণতঃ মানুষের ধনদৌলত যদি একটু বেশি থেকে থাকে তবে সে একটু অহঙ্কারী হয়ই। শাদ্দাদ বাদশাহের দেমাগ এত বেশী হয়েছিলযে, একদিন সে দরবারে বসে উজীর-নাজীরদের ডেকে সিংহের মতো হুঙ্কার দিয়ে বললোঃ দেখ, আমার যে রকম শক্তি সামর্থ্য আর খুবসুরৎ চেহারা, তাতে আমি কি খোদা হবার উপযুক্ত নই? উজীর-নাজীরেরা তাকে তোষামোদ করে বললোঃ নিশ্চয়ই।এত যার ধন-দৌলত, লোক-লস্কর, উজীর-নাজীর, দালান-কোঠা, হাতী-ঘোড়া তিনি যদি খোদা না হন, তবে আর খোদা হবার উপযুক্ত এ দুনিয়ায় কে? এত সিন্দুক ভরা মণিমুক্তা, হীরা-জহরৎ এত হাতী-ঘোড়া আর দরবার ভরা আমাদের মতো উজীর-নাজীর খোদা তার চৌদ্দপুরুষেও দেখেনি। সুতরাং আপনিই আমাদের খোদা। আরব দেশের লোকেরা সে সময়ে গাছ, পাথর প্রভৃতি পূজা করতো। শাদ্দাদ এটা মোটেই পছন্দ করতো না। সে হুকুম জারি করলোঃ কেউ ইটপাথর বা অন্য মূর্তি পূজা করতে পারবে না, তার বদলে সম্রাট শাদ্দাদকে সকলের পূজা করতে হবে। সাত মুলুকের বাদশাহ শাদ্দাদ, তার হুকুমের ওপরে কথা বলে এমন সাধ্য কারো নেই। সুতরাং তার হুকুম মতো কাজ চলতে লাগলো। একদিন গুদ নামক একজন পয়গম্বর তার দরবারে এসে হাজির হলেন। পয়গম্বরেরা খোদার খুব প্রিয়। তাঁরা নবাব বাদশাহদের ভয় করতে যাবেন কেন। হুদ পয়গম্বর তাকে বললেনঃ তুমি নাকি খোদার ওপর খোদকারী করার চেষ্টা করছো? তোমার এ দুঃসাহস কেন? পরকালের ভয় যদি থাকে তবে আল্লাহতা’লার উপর ঈমান আনো। হুদ নবীর দুঃসাহস দেখে দরবারের সকলে অবাক! উজীর-নাজীর, পাত্র-মিত্র যার ভয়ে সর্বদা সন্ত্রস্ত-স্বয়ং বেগম সাহেবা যার কথার ওপরে কথা বলতে পারেন না, সামান্য একজন দরবেশ কিনা তাকে দিচ্ছে উপদেশ! এত বাচালতা! ক্রোধে শাদ্দাদের চোখ দুটো দাল হয়ে উঠলো। মেঘগর্জনের মতো হুঙ্কার দিয়ে সে জিজ্ঞাসা করলোঃ মূর্খ ফকির, তোমার খোদাকে মানতে যাবো কিসের জন্য? হুদ নবী বললেনঃ তিনি পরম মঙ্গলময়। তিনি দুনিয়াতে তোমাকে সুখে রাখবেন এবং মৃত্যুর পর তোমাকে বেহেশতে থাকতে দিবেন। শাদ্দারেদ ওষ্ঠে এইবার ক্রোধের পরিবর্তে হাসি ফুটে উঠলো। বললোঃ তোমার খোদা কি আমার থেকেও বেশী সুখী। হুদ হেসে জবাব দিলেনঃ নিশ্চয়ই! খোদাতা’লা নেকবান্দার জন্য বেহেশত তৈরি করেছেন। দুনিয়া ছেড়ে চলে গেলে পরকালে বেহেশত। বেহেশতের অতুলনীয় শোভা, অনন্ত শান্তি, অফুরন্ত সুখ, চাঁদের মতো খুবসুরৎ হুরী তো তুমি ভোগ করতে পারবে না। শাদ্দাদ অবজ্ঞা ভরে হো-হো করে হেসে উঠলো। বললোঃ রেখে দাও তোমার খোদার বেহেশতের কাহিনী। অমন আজগুবি গল্প ঢের ঢের শুনেছি। হুদ বললেনঃ আজগুবি নয় –সত্যি সত্যিই। খোদার এমন অপরূপ বেহেশত কি তোমার পছন্দ হয় না? শাদ্দাদ জবাব দিলোঃ হবে না কেন –এমন আজব বেহেশত কার অপছন্দ বলো? কিন্তু তাই বলে তোমার খোদার পায়ে আমি মাথা ঠুকতে যাবো কেন? আমি কি খোদার মতো বেহেশত তৈরি করতে পারি না! হুদ বললঃ বাদশাহ, তোমার মাথা খারাপ হয়েছে, নইলে এমন কথা বলতে না। খোদা যা করতে পারেন তা মানবের সাধ্যাতীত। শাদ্দাদ সহাস্যে বললোঃ মূর্খেরা এমন কল্পনাই করে বটে! কিন্তু আমি নিশ্চয়ই পারবো। তোমার খোদার চেয়ে আমার টাকা পয়সা লোক-লস্কর কিছু অভাব আছে নাকি? আমি দেখিয়ে দেবো, তোমার খোদার বেহেশত থেকে আমার বেহেশত কত বেশি সুন্দর। শাদ্দাদের কথা শুনে হুদ ভয়ানক রেগে গেলেন। বললেনঃ মূর্খ বাদশাহ এত স্পর্ধা তোমার! শীঘ্রই দেখতে পাবে –এত অহঙ্কার কিছুতেই খোদা সহ্য করবেন না। শাদ্দাদ ক্রোধে কাঁপতে কাঁপতে চিৎকার করে উঠলেনঃ কে আছ, এই ভিখারীটাকে ঘাড় ধরে বের করে দাও। হুদ নবী অপমানিত হয়ে চলে গেলেন। কিছুদিন পরের কথা। বদখেয়ালী শাদ্দাদ তার তাঁবেদার বাদশাহদের ফরমান জারি করে জানালেনঃ খোদার বেহেশতের চেয়ে বেশী সুন্দর করে অপর একটি বেহেশত আমি সৃষ্টি করতে সঙ্কল্প করেছি। সুতরাং উপযুক্ত জায়গায় সন্ধান করো। হুকুম মাত্র জায়গা তল্লাসের ধুম পড়ে গেলো। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আবার দেশের এয়মন স্থানটি সকলের পছন্দ হলো। স্থানটি লম্বায় আট হাজার মাইল আর চওড়ায় ছিলো পাঁচ হাজার মাইল। বেহেশতের উপযুক্ত জায়গা পাওয়া গেছে শুনে শাদ্দাদ খুশী হলো। তারপর হুকুম জারি করলো যে সাত মুলুকে যে, সব হীরা, মণি, মুক্তা, জহরৎ আছে সব এক জায়দগায় জড়ো করতে হবে। বাদশাহের হুকুম কেউ অমান্য করতে সাহস করলো না। দেখতে দেখতে দামী দামী হীরা, মণি, পান্না, জহরৎ এয়মন মুলুকে জমা হতে লাগলো। দুনিয়ার যেখানে যত সুন্দর মূল্যবান জিনিস ছিলো বেহশত সর্বাঙ্গ সুন্দর ইয়াকুত ও মার্বেল যোগার করা হলো। লক্ষ লক্ষ মজুর ও কারিগর কাজ করতে আরম্ভ করলো। দিনরাত পরিশ্রম করে তিনশ’ বছর ধরে বেহেশত রচনা করা হলো। তা সত্য সত্যই বিচিত্র কারুকার্যময় ও অপূর্ব চমকপ্রদ হয়েছিল। এই বেহেশতের যে দিকে নজর দেওয়অ যায় সেই দিকেই অপরূপ। চারিদিকে শ্বেত পাথরের দেওয়াল ও থাম, তাতে কুশলী শিল্পীদের চমৎকার কারুকার্য-দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। দেয়ালের গায়ে নানা রঙের ইয়াকুত পাথর দিয়ে এমন সুন্দর লতাপাতা ও ফুল তৈরি করা হয়েছে যে, ভ্রমর ও মৌমাছির জীবন্ত মনে করে তার ওপরে এসে বসে। রঙমহলের চারিপাশে হাজার হাজার ঝড় লণ্ঠন ঝুলছ, কিন্তু বাতির দরকার হয় না। অন্ধকার রাত্রেও সেই ঘরগুলো চাঁদের আলোর মতো স্নিগ্ধ ও উজ্জ্বল। মহরে ধারেই বসবাস ঘর ও হাওয়াখানা। মণিমুক্তা-খচিত শ্বেত ও কৃষ্ণবর্ণ পাথরের কৌচ ও মেঝে সজ্জিত রয়েছে। মেঝের ওপরে নানারঙের নানা আকারের সুন্দর সুন্দর ফুলদানী, তাতে সাজানো রয়েছে জমরদ ও ইয়াকুত পাথরের নানা রকমের ফুলের তোড়া। তা থেকে আতর গোলাপ মেশক ও জাফরাতের খোশবু ছুটছে। মহলের চারিপাশে বাগান। বাগানে সোনা রূপার গাছ। তার পাতা, ফল, ফুল, নানা বর্ণের পাথর দিয়ে তৈরি। ভ্রমর ও মৌমাছিগুলো এমন সুন্দরভাবে নির্মিত যে তারা বুঝি সত্য সত্যই ফুলের ওপরে বসে মধু পান করছে। সেই সব ফুলফল থেকে যে সৌরভ বের হচ্ছে তাতে চারিদিকের বাতাস ভর ভর করছে। এই সব গাছের নিচে দিয়ে কুল কুল শব্দে বয়ে চলেছে গোলাপপানির নহর। তার পানি এত স্বচ্ছ যে, মনে হয় তরর মুক্তার ধারা বয়ে যাচ্ছে। সেই নহরের ধারে ধারে হীরা-মণি-মুক্তার বাঁধানো ঘাট। সেখানে চুনি-পান্নার তৈরি শত শত সুন্দরীরর যেন গোসল করছে। তার পরেই নাচঘর। কোনো ঘরে ওস্তাদেরা হাত নেড়ে মাথা দুলিয়ে নানা অঙ্গতরী করে গান করছে, বাদ্যযন্ত্র বাজাচ্ছে –কোনো ঘরে কিন্নকণ্ঠি সুন্দরী বালিকারা তালে তালে নাচছে এবং গান গাইছি। এরাই শাদ্দাদের বেহেশতের হুরী। নানা দেশ-বিদেশ থেকে সংগ্রহ করে এদের এখানে জমায়েত করা হয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে নাচছে চাঁদের মতো খুবসুরৎ হাজার হাজার কচি কচি বালক। অনিন্দ্য সুন্দর করে বেহেশত নির্মাণ করা হয়ে গেলো। শাদ্দাদকে সংবাদ দেওয়া হলো। সে তখন অধীন নবাব বাদশাহদিগকে হুকুমজারি করে জানিয়ে দিলো, তারা যেন শীগগিরই শাদ্দাদের সহিত মিলিত হয়। তাদের সঙ্গে নিয়ে সে তার বেহেশত দেখতে যাবে। প্রজাগণকে আমোদ আহলাদ করবার হুকুম দেওয়া হলো। বাদশাহের হুকুম মেনে তারা নাচ করতে লাগলো এবং হরদম বাজি পোড়াতে লাগলো। এক শুবদিনে সুন্দর সুসজ্জিত ঘোড়ায় চড়ে পাত্র-মিত্র, উজীর-নাজীর, লোক-লস্কর, সৈন্য-সামন্ত সঙ্গে নিয়ে ঢাক, ঢোল, কাড়া, নাকাড়া, দামামা বাজাতে বাজাতে হাজারবাদশাহ তার সৃষ্ট বেহেশত দেখতে চললো। গল্পগুজব করতে তারা এগিয়ে চললো। দূর থেকে নজর পড়লো বেহেশতের একটা অংশ। এত চমকপ্রদ, এত জমকালো যে, চোখ ঝলসে যেতে লাগলো। আনন্দে শাদ্দাদের মুখ দিয়ে কথা সরলো না। তাপর একটু সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে বলতে লাগলোঃ ঐ আমার বেহেশত! ঐ বেহেশতের সিংহাসনে আমি খোদা হয়ে সববো, আর তোমরা হবে আমার ফেরেশতা। হুরীর যখন হাত পা নেড়ে নাচবে আর গাইবে তখন কি মজাই না হবে। উজীর-নাজীর ওমরাহগণ তার কথায় সায় দিয়ে তোষামোদ করে তাকে কুশী করতে লাগলো। এমনি করতে করতে তারা বেহেশতের দরজায় এসে হাজির হলো। শাদ্দাদ সকলের আগে আগে যাচ্ছিল! সে বেহেশতের দ্বারদেশে একটি রূপবান যুবক দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো। তার সুন্দর চেহারা দেখে খুশী হয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলোঃ তুমি কি এই বেহেশতের দারোয়ান? যু্বক উত্তর করলোঃ আমি মালাকুল মওৎ! শাদ্দাদ চমকে উঠে জিজ্ঞাসা করলোঃ তাঁর মানে? যুবক উত্তর করলোঃ আমি আজরাইল। তোমার প্রাণ বের করে নিয়ে যাবার জন্য খোদা আমাকে পাঠিয়েছেন। শাদ্দাদ ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে উঠলো। চিৎকার করে বললোঃ সাবধান! আমার সঙ্গে তামাসা! কে আছিস বলে অন্যের প্রতীক্ষা না করে নিজেই খাপ থেকে তরবারী বের করে যুবককে কাটতে অগ্রসর হলো। কিন্তু কি আশ্চর্য! তার হাত উঁচু হয়েই রইলো। উত্তেজনায় শরীর দিয়ে দরদর ধারায় ঘাম নির্গত হতে লাগলো। চিৎকার করে বললোঃ সৈন্যগণ, শয়তানকে মাটিতে পুঁতে ফেলো। যুবক অট্টহাসি হেসে প্রশ্ন করলোঃ কই তোমার সৈন্য সামন্ত? শাদ্দাদ পিছন ফিরে দেখতে পেলো, তার লোক-লস্কর, সৈন্য-সামন্ত একেবারে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভয়ে সে ঠক ঠক করে কাঁপতে লাগলো। তারপর ভীত কণ্ঠে বললোঃ সত্যই তুমি কি আজরাইল? আজরাইল বললোঃ হ্যাঁ। দেরী করবার ফুরসৎ আমার নেই। আমি এখনই তোমার প্রাণ বের করে নেবো। শাদ্দাদ চারিদিকে অন্ধকার দেখতে লাগলো। সে শিশুর মতো নিঃসহায়ভাবে ভেউ ভেউ করে কেঁদে উঠলো। মিনতি করে বললোঃ একটু সময় আমাকে দাও ভাই আজরাইল। অনেক সাধ করে আমি বেহেশত তৈরি করেছি, একটিবার আমায় তা দেখতে দাও! এই বলে সে ঘোড়া থেকে নামবার চেষ্টা করলো। মেঘের মতো গর্জন করে আজরাইল বললোঃ খবরদার, এক পা এগিয়ে আসবে না। শাদ্দাদ হাউ-মাউ করতে শুরু করে দিলো। সেই অবস্থাতেই আজরাইলতার প্রাণ বের করে নিয়ে চলে গেলো। তারপর কি হলো? হঠাৎ একটা ভীষণ আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে শাদ্দাদের অতি সাধের বেহেশত, তার শ্রী, ঐশ্বর্য, লোক-লস্কর, উজীর-নাজীর, পাত্র-মিত্র সবকিছু চক্ষের পলকে মাটির মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেলো। দুনিয়ার ওপরে তার আর কোন চিহ্নই রইলো না। শুধু মানুষের মনে চিরদিনের মতো আঁকা হয়ে রইলো আত্মম্ভরিতা অহঙ্কারের শাস্তি কিরূপ ভয়ঙ্কর। সংগৃহীত কোরাণের গল্প-বন্দে আলী মিয়া
Share:

Blog Archive

Definition List

Unordered List

Support